বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১১

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি


আলো আমার আলো ওগো
আলোয় ভূবন ভরা
আলো নয়ন ধোঁয়া আমার
আলো হৃদয় হরা-
কবিগুরুর রচিত এ চরনগুলো আজ বার বার মনে পড়েছে। কেননা আজ আমরা আলোচনা করবো সেই প্রদীপ্ত আলোকছটা নিয়ে, যার উজ্জ্বলতায় দূরীভূত হয় সকল অন্ধকার। সে আলোর নাম শিক্ষা। যুগের পরিবর্তনে আজ মানুষ সৃষ্টি করেছে কল্যান রাষ্ট্রের যেখানে শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর জনগনকে এ অধিকার দেয়ার লক্ষ্যেই উদ্ভব হয় শিক্ষানীতির। একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সুষ্ঠুভাবে এ অধিকার দেয়ার লক্ষ্যেই সরকার শিক্ষানীতি প্রনয়ন করে থাকে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৭টি শিক্ষানীতির প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু দূভার্গ্যজনক হলেও সত্যি যে, এর মধ্যে একটিরও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারনে আজও এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এক দোদুল্যমাণতায় ভুগছে। আর আজকের ছাত্রসমাজ হবে আগমীর দেশ গড়ার কারিগর।


ভূমিকা:
একটি জাতীয় শিক্ষানীতির অভাবের কথা বলাবলি হচ্ছে বহুকাল ধরেই। কিন্তু মূলত রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভাজনের কারণেই এ অভাব দূর করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ণের চেষ্টা চলছে এবং একাধিক কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ।কিন্তু বারবার নীতি প্রণীত হলেও কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। এভাবে আটটি প্রতিবেদন হিমাগারে জমা রয়েছে। পাশাপাশি অতীত ইতিহাসের দিকে তাকলেও দেখা যায়, পাকিস্তান আমলেও শিক্ষানীতি নিয়ে এমন ব্যর্থ প্রয়াসের সংখ্যাও কম ছিলো না।

স্বাধীনতার পরপর যে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সংবিধান রচিত হয় তার উপর ভিত্তি করেও শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রয়াস করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।

ইতিমধ্যে অনেক সময় গড়িয়েছে, বুড়িগঙ্গার, কর্ণফুলী দিয়ে অনেক পানি বয়ে গেছে, সমস্যায় জর্জরিত দেশেবাসীর পিঠ যেমন দেয়ালে ঠেকেছে, তেমন অনেক বিষয়ে চোখ ও খুলছে। ছাত্রসমাজ সহ দেশের সকল মানুষের একটি অন্যতম দাবি হয়ে উঠেছে যুগোপযোগী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

একুশ শতকের প্রতিযোগীতা হবে মেধায়, পেশীতে নয়। এই প্রতিযোগিতা হবে মননের, সৃজনশীলতার কিন্তু বাচালতার নয়। এমন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন সৃষ্টিশীল মস্তিস্কের। আর এসব অর্জনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার , যার জন্য প্রয়োজন একটি যুগোপযোগী আধুনিক ও প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষানীতির।


শিক্ষা কী ঃ
শিশুর সর্বতোমুখী বিকাশ সাধনকে শিক্ষা বলে। মানব জাতি এই শিক্ষা শব্দটির সাথে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিচিত। শিক্ষা হলো এক বিশেষ দর্শন যা জীবন দর্শনের উপর নির্ভরশীল।

শিক্ষা জীবনের মতই ব্যাপক। শিক্ষা হলো আজীবন সাধনার সামগ্রী। মানুষের যেমন চাহিদার শেষ নাই তেমনি শিক্ষার ও শেষ নাই।

শিক্ষা শব্দটি ইংরেজি ঊফঁপধঃরড়হ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। ইংরেজি ঊফঁপধঃরড়হ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ঊফঁপধঃরড়হ, ঊফঁপধৎব এবং ঊফঁপবৎব এর পরিবর্তিত রূপ। এই ঊফঁপধঃরড়হ, ঊফঁপধৎব শব্দের অর্থ হলো বাহির করা , প্রশিক্ষণ দেয়া, পরিচালিত করা। আর ঊফঁপধৎব শব্দের অর্থ ভিতর হইতে পরিবর্তন আনা, অভ্যন্তরীন গুণাবলীর পরিপুষ্টি সাধন করা। কাজেই এর বুৎপত্তিগত অর্থ দাঁড়ায়, যাহা মানব শিশুর শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি বিধানে সহায়তা করা।
সক্রেটিসের মতে “শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের আবিস্কার।
প্লেটোর মতে, “শরীর ও আত্মার পূর্ণতার জন্য যাহা কিছু প্রয়োজন তা হলো শিক্ষা”।
লেনিনের মতে-“মুক্তি সংগ্রামই শিক্ষা”।
ক্যান্টের মতে “আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনই শিক্ষা”।

শিক্ষা সম্পর্কে আধুনিক সংজ্ঞাটি প্রদান করেছেন একদল আমেরিকান শিক্ষাবিদ ১৯৪৫ সালে;
“শিক্ষা এমন এক সুসংবদ্ধ উপায়/কৌশল বা সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তির সর্বাধিক কর্মক্ষমতা, ধ্যান ধারণা রুচি ও স্বভাবের পরিবর্তন সাধান করে এবং যে পরিবেশে, বিশেষ করিয়া সে স্কুল পরিবেশে যে বাস করে তাহার মধ্যে হইতে সামাজিক সর্বোচ্চ যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত উন্নতি আনয়ন করাই শিক্ষা”।
অর্থাৎ বলা যায় মানুষকে মানুষ করাই শিক্ষা যা আত্মোপলব্ধিতে সাহায্য করে।


শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঃ
বাস্তবিক শিক্ষার নিজস্ব কোন লক্ষ্য নাই। ব্যক্তি বা জাতির লক্ষ্যই শিক্ষার লক্ষ্য।
আদর্শ পরিবার ও সমাজ সৃষ্টির জন্য মনুষ্য ও কর্মশক্তিবৃদ্ধি ও অর্জনই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। পাশাপাশি মানুষের উন্নত দৃষ্টি শক্তি বা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনই শিক্ষার আসল লক্ষ্য, আর একে কেন্দ্র করে কল্যাণকর আদর্শের প্রতি দৃষ্টি রেখে পরিকল্পিতভাবে কাঙ্খিত দিকে অগ্রসর হওয়াই হলো শিক্ষার প্রধান কাজ। তবে এসব উদ্দেশ্যবলী অনেক সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় এসব উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সচেতন ব্যক্তিবর্গের সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।

আচরনের সুপরিবর্তন ছাড়াও পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোই হলো শিক্ষা। এটি মানবজাতির দৃষ্টিদান ও যোগসূত্র স্থাপনে পারস্পরিক কতর্ব্যবোধকে উদ্বৃদ্ধ করে। এ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাতটি। যথাÑজ্ঞানার্জন, উপলব্ধি, দক্ষতা বৃদ্ধি, মনোভাবের কাংখিত পরিবর্তন, খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা লাভ, চিন্তা শক্তির বিকাশ ও মূল্যায়ন। তবে সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় এই শিক্ষার কিছু জাতীয় উদ্দেশ্য বিদ্যমান, এগুলো হলোঃ-

১। যোগ্যতানুসারে প্রতিটি মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন।
২। পারস্পরিক সমঝোতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি।
৩। জাতীয় মূল্যবোধ তথা কর্তব্যজ্ঞান, ন্যায় পরায়নতা, শৃঙ্খলাবোধ শিষ্টাচার ও একাত্মবোধ সৃষ্টি।
৪। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে দক্ষ ও সৃজনশীল জনশক্তি প্রস্তুতকরণ।
৫। শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদাবোধ সৃষ্টি এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা।
৬। মেধা ও প্রবনতা অনুসারে জীবিকা অর্জনের জন্য যথারীতি প্রশিক্ষণ প্রদান।
৭। প্রয়োজনীয় বস্তুর উদ্ভাবন এবং সত্য মিথ্যা চিহ্নিতকরণ।



তবে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিবিধ মনীষী বিবিধ মতামত প্রদান করেছেন-
প্লেটোর মতে- “শরীর ও আত্মার সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধনই শিক্ষার লক্ষ্য”।
অধ্যাপক আলী আজমের ভাষায়-“শিক্ষার লক্ষ্য হইতেছে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, উৎকর্ষ সাধন, শিক্ষার্থীর প্রবৃত্তিসমূহকে যথাযথ বিকাশ লাভের সুযোগ প্রদান , কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে উন্নতির পথে আগাইয়া দেয়া, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানসিক ক্ষমতার ভিত্তিতে সমাজের প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ে যাহাতে পূর্ণ আত্মবিকাশের সুযোগ লাভ করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা, এমনকি কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানবিক আবেগরূপে সম্পদ প্রদানের ব্যবস্থা করা।”
জামার্ন দার্শনিক ক্যান্ট-এর মতে-“শিক্ষার উদ্দেশ্য বর্তমানে নগদ কিছু পাওয়া নয়। বরং ভবিষ্যতে কালোপযোগী অনেক কিছু লাভ করার ব্যবস্থা করা।”
আধুনিক শিক্ষার জনক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশোর মতে-“শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো কৃত্রিমতা বর্জিত পরিবেশে শিশু প্রকৃতির অবাধ বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনধারনের বাস্তব কলাকৌশল অর্জন”।

শিক্ষার্নীতি কী ঃ
শিক্ষা হলে বর্তমানের কানন ও ভবিষ্যতের মুকুল। এটিই জাতির মেরুদন্ড। কোন জাতির সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির নিয়ামক হলো শিক্ষা।

মহাকবি মিল্টনের কথায় শিক্ষাকে যেমন ঐধৎসড়হরড়ঁং ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ নড়ফু, সরহফ ধহফ ংড়ঁষ তেমনি কালের সিঁড়ি। যেকোন জনপদের জীবনধারা ও সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষার নির্দেশিত রাজপথ। কোন জনপদের মানুষের জীবনধারা, সামাজিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ নির্মিত হয় যে দেশ ও জাতি কর্তৃক গৃহীত শিক্ষানীতি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে।

শিক্ষানীতি বা ঊফঁপধঃরড়হ চড়ষরপু মূলত দু'টো শব্দ। শিক্ষা+নীতি (ঊফঁপধঃরড়হ + চড়ষরপু)। এই দুইটি বিষয় পৃথকভবে আলোচনা করলে শিক্ষানীতি বিষয় একটি সঠিক ও পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়।
শিক্ষা হলো এমন এক গতিশীল প্রক্রিয়া যা মানুষের সর্বতোমুখী বিকাশ সাধন করে। আর নীতি হলো কোন বিষয়ের ব্যবস্থাকীয় কার্যাবলী সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের দিক-নির্দেশনা। এর উপরই নির্ভর করে সে বিষয়ের কর্মসূচী প্রণীত ও গৃহিত হয়। নীতির মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবস্থার উদ্দেশ্যের ঐক্যতা, নমনীয়তা, সহযোগিতা, সার্বজনীনতা, ভারসাম্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত ইত্যাদি পরিচালিত হয়।

শিক্ষানীতি হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য অনুযায়ী তদ বিষয়ক কার্যাবলী সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের দিক নির্দেশনা এবং এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। আর তাই একটি সুষ্ঠ শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি আদর্শ শিক্ষানীতির প্রয়োজন হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতি বলতে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার আলোকে আশু-কতর্ব্যগুলো চিহ্নিত করা ও সরকারকে সেইভাবে পরামর্শ দেয়াকে বোঝায় যার ভিত্তিতে সরকার তার শিক্ষাবিষয়ক কর্তব্য স্থির করবে। এই শিক্ষানীতি মূলত শিক্ষার লক্ষ্যাদর্শভিত্তিক ও দিকনির্দেশনা মূলক দলিল, এর ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দসহ বিস্তারিত পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দপ্তর ও অধিদপ্তর সমূহ।

শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষা কমিটি ঃ
একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য সরকার যে দল বা গোষ্ঠীর উপর দায়িত্ব অর্পন করে তাই হলো শিক্ষা কমিশন। মূলত শিক্ষা কমিশন একটি দেশের শিক্ষানীতি প্রণয়নে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। বাংলাদেশে আজ অবধি অনেকগুলো শিক্ষাকমিশন তৈরি হয়েছে। যার উপর দায়িত্ব ছিলো একটি শিক্ষানীতি তৈরির কিন্তু কমিশনের শিক্ষানীতি বিষয়ক রিপোর্টের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষা কমিশনগুলো হলো ঃ-

২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান মিয়া কমিশন ২০০২ সালের ড. এম এ বারী শিক্ষা কমিশন ১৯৯৭ সারের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন ১৯৮৮ সালে মফিজ উদ্দীন শিক্ষা কমিশন ১৯৭২ সালের কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। শিক্ষা কমিটি হলো কিছু সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ যারা মূলত কোন শিক্ষানীতির আলোকে সংশোধনমূলক বা সময়োপযোগী খসড়া শিক্ষানীতির পরিকল্পনা পেশ করে। যেমন ঃ ২০০৯ সালের খসড়া শিক্ষানীতি তৈরির জন্য গঠিত কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিটি।


শিক্ষানীতির ইতিহাসঃ
ক্স ব্রিটিশ আমলের শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি :
শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়নের ইতিহাস আমাদের বেশ উজ্জ্বল। শিক্ষানীতি হিসেবে রিপোর্টগুলো গৃহিত হোক বা না হোক, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কমিশন বা কমিশনের আদলে কমিটি বা টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে এবং সেগুলোর প্রতিটি একটি করে রিপোর্ট প্রদান করেছে। ব্রিটিশ ভারতে ১৭৯২ সালে সর্বপ্রথম চার্লস গ্রান্ট শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। প্রায় দুশ বছরের শাসনামলে ব্রিটিশরা মোট নয়টি কমিশন রিপোর্ট প্রদান করে। যেমন-
১. ১৯৭২: চার্লস গ্রান্ট শিক্ষা কমিশন
২. ১৮১৩: কোম্পানি সনদ
৩. ১৮৩৫: লর্ড ম্যাকলে কমিটি
৪. ১৯৩৮: উইলিয়াম অ্যাডামস কমিটি
৫. ১৮৫৪: উডস এডুকেশন ডেসপাচ
৬. ১৮৮২: ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার শিক্ষা কমিশন।
৭. ১৯১৯: এম ই স্যাডলার শিক্ষা কমিশন
৮. ১৯৩৪ : সা প্র“ শিক্ষা কমিশন
৯. ১৯৪৪: জন সার্জেন্ট শিক্ষা কমিশন।

পাকিস্তান আমলে শিক্ষা কমিশন ও কমিটি ঃ
১৯৪৭ খৃষ্টাব্দের ১৪ আগষ্ট তারিখে এ উপমহাদেশে স্বাধীন গণতাান্ত্রিক ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রেক্ষপটে এ সদ্যজাত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনধারায় এক ব্যাপক ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তন অবস্থার চাহিদা পূরাণার্থে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার বহু কমিশন ও কমিটি গঠন করে দেশে প্রচলিত বৃটিশ প্রবর্তিত ত্র“টি পূর্ণ ও ভারসাম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার জন্য প্রয়াস চালান, কারণ শিক্ষা ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় ভেবে ইসলামি ভাবধারার নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবতর্নের জন্য জনগণ ও সোচ্চাার দাবী তোলেন।

মাওলানা আকরাম খান শিক্ষা কমিটি (১৯৪৯-৫১)
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় পর্যায়ে সারা দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে করাচিতে একটি শিক্ষা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অধিবেশনের সুপারিশমালার আলোকে দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সময়োপযোগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে সরকার প্রয়াসী হন, জনগণের অনুভূতির প্রতি অনুকূল সাড়া দিতে গিয়ে সরকার ১৯৪৯ খৃষ্টাব্দের ১৩ মার্চ শিক্ষাসমস্যাকে ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাওলানা আকরাম খানের সভাপতিত্বে ১৭ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতির নামানুসারে এটি আকরাম খান শিক্ষা কমিটির নামে পরিচিত।

পূর্ববঙ্গ মাদরাসা শিক্ষা উপদেষ্টা আশরাফুদ্দিন চৌধুরী কমিটি-১৬৫৬)
পূর্ব বাংলার মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে তদানীন্তন সরকার একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটির নাম ছিল পূর্ববঙ্গ মাদরাসা শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি। জনাব আশরাফুদ্দিন চৌধুরী এ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। তার নামানুসারে এ কমিটি আশরাফুদ্দিন চৌধুরী কমিটি নামে খ্যাত।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঃ
১. পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় কি কি ত্র“টি বিচ্যুতি রয়েছে তা চিহ্নিত করত: তা দূরীকরণ ও দেশের জন্য একটি যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পন্থা উদ্ভাবন করা।

২. দেশের উভয় ধারার শিক্ষা সমন্বিত করার লক্ষ্যে মাদরাসা শিক্ষা কোন স্তর প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরেরর সমান হবে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পেশ করা।
৩. মাদরাসা ঃ শিক্ষার শিক্ষাক্রমে কিভাবে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সমাবেশ ঘটানো যায় সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা। যাতে এ ধারার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সম্পানান্তে সম্মানজনকভাবে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন সক্ষম হয়।

পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সংস্কার (আতাউর রহমান খান) কমিশন-১৯৫৭
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাস্তাবিকভাবে শিক্ষার কোন উন্নয়ন হয়নি। এমনকি ১৯৫২ খৃষ্টাব্দেই মাওলানা আকরাম খান কমিশনে বহু মূল্যবান সুপারিশ করা হলে ও সুপারিশসমূহের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি।
পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল মূলত পুথিকেন্দ্রিক ও সেকেলে প্রকৃতির জীবন ও যুগের চাহিদার নিরিখে পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৫৭ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদেশের সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে যাতে সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিস্ট রাজনীতিবিদ জনাব আতাউর রহমান খান (চেয়ারমান ক্রমানুসারে এ কমিশন রিপোর্ট আতাউর রহমান খান ককিশন রিপোর্ট নামে পরিচিত। এ কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার সংস্কার মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কার ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পেশ করেন।

জাতীয় শিক্ষা (এস এম শরীফ) কমিশন রিপোর্ট ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে
১৯৫৮ খৃষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারী পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান কমিশনের উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণগঠন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেন এবং আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যমানসমূহ আরো সুষ্ঠুভাবে প্রতিফলিত হতে পারে এমন একটি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি একথাও বলেন যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতে হবে, যেন তা কৃষি, বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে উন্নয়নে সহায়তা করতঃ জাতির ক্রমবর্ধমান ও চাহিদা মেটাতে পারে। চরিত্র গঠন উন্নতমান অর্জন এবং শ্রমের মর্যাদাবোধ সৃষ্টির দিকে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত। তিনি আরো বলেন কমিশনকে দেশের সমগ্র জনশক্তি ও জাতীয় সম্পদ সর্বতোভাবে কাজে লাগাবার উপায় কি তার পন্থা নির্দেশ করতে হবে।

কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ঃ
যে প্রস্তাব অনুযায়ী কমিশন নিযুক্ত হয় তার ভূমিকায় বলা হয়েছে পাকিস্তানের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা জাতির অভাব পূরণের ও প্রয়োজন মেটাবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। জানগণের আশা আকাঙ্খা দেশের আর্থ সামাজিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষাব্যবস্থার পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার সমন্বয় ও সুষম উন্নয়নের নিশ্চয়তা বিধানার্থে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুর্ণগঠনের যথাযোগ্য পন্থা সুপারিশ করার জন্য একটি উপযুক্ত কমিশন গঠন করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

(হামুদুর রহমান) কমিশন রিপোর্ট ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দ
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশন ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দের ২৩শে আগষ্ট তার রিপোর্ট জমা দেন এ কমিশন কর্তৃক পেশকৃত রিপোর্টের সুপারিশমালা ১৯৬০ খৃষ্টাব্দের ৬ ই এপ্রিল পাকিস্তান সরকার অনুমোদন করে ১৯৬১ -৬২ শিক্ষাবর্ষে সুপারিশমালার আলোকে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন শুরু করেন। এদিকে কমিশন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে সুপারিশকৃত পূর্ব পাকিস্তানে এবং সেপ্টেম্বর মাস পশ্চিম পাকিস্তানে অধ্যাদেশ আকারে সরকারিভাবে যোষণা করা হয়। সরকারি ভাবে ঘোষনার পরই এক বছরের মধ্যে ১৯৬২ খৃষ্টাব্দের প্রথম ভাগেই প্রথমে পূর্বপাকিস্তান এবং কিছু পরে পশ্চিম পাকিস্তানে আগুনঝরা ছাত্র আন্দোলন খুব জোরেশোরে শুরু হয়ে যায়। তারা কলেজও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে যে সংস্কার সাধন শুরু করা হয় তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনমূখী ছাত্ররা আইনও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার লোকজনদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি সংগ্রামে লিপ্ত হতো লাগলো। ফলে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এইসব আন্দোলনকারী ছাত্রদের হটবার জন্য আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য হতে হল। প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণভাবে এ শিক্ষা সংস্কারের বিরুদ্ধে এবং বিশেষ করে তিন বছর মেয়াদী স্নাতক পাশ কোর্স প্রবর্তনের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন তীব্রতার হতে থাকে। এই ফলশ্র“তিতে পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২ খৃষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে এক হরতাল আহবান করা হয়। একইভাবে পূর্ব পাকিস্তানের অনুসরণের পশ্চিম পাকিস্তানে ও ছাত্র আন্দোলন জোরদার হতে থাকে এবং হরতাল ও অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানের উভয় প্রদেশে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকলে দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যথাক্রমেই সরকার বিরোধী রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে। ফলে সরকার পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে তিন বছর মেয়াদী প্রস্তাবিত ডিগ্রী পাস কোর্স পরিহার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৪ খৃষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর তারিখে সর্বপ্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে পেশোয়ার শহরে এমনি এক দুর্যোগমুহুর্তেও দেশের সংকটাপন্ন ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সুলতানে ঘোষনা করেন যে, ছাত্রদের সমস্যা নিরসনের জন্য সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করবে। এ পরিস্থিতিতে সরকার এ কমিশন গঠন করেন এবং তাদের কর্ম পরিধি নির্ধারণ করে দেন।

পাকিস্তানের নতুন (এয়ার মার্শাল এম নূর খান শিক্ষানীতি ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দ) ঃ
দেশে প্রচলিত দুটি শিক্ষা ধারার কোনটিই পুরোপুরি ভাবে সার্থক ও সন্তোষজনক নয়। অতএব, দেশের জন্য এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটাতে হবে যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন অধিকতর কার্যকর ভাবে পূরণে সক্ষম হয়।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নতুন শিক্ষা নীতির মূল উদ্দেশ্য হবে ঃ
১। ইসলামের ধর্মীয় ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সকলের জন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধন নিশ্চিত করা।
২। একটি শিক্ষক সমাজ গড়ে তোলা।
৩। বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের প্রতি অধিকার গুরুত্ব প্রদান করা।
৪। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদেরকে শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫। শিক্ষাকে জাতীয় ঐক্যের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার নিশ্চিত করা।

পাকিস্তান সরকারের নতুন (শামসুল হক কমিটি) শিক্ষা ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে ঃ
১৯৬৯ খৃস্টাব্দের ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট তার জাতীয় বেতার ভাষনে এবং পরবর্তীতে এক প্রেস কনফারেন্স ঘোষণা করেন যে, তার সরকার অতীতের তুলনায় অধিকহারে সামাজিক কর্মক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করছে। শিক্ষার সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের সমস্যা দূরীকরণে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রচেষ্টা চালাবে। এতদুদ্দেশ্যে সরকার সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি নিবিড় পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করার লক্ষ্যে কেন্দ্রে এবং প্রাদেশিক পযার্য়ে কয়েকটি অনুধ্যান কমিটি গঠন করেন। ১৯৭০ খৃস্টাব্দের ১লা জানুয়ারী সরকার সংশোধিত প্রস্তাবলীর পুর্ণবিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। যা তেতাঁরা বিস্তারিতভাবে এর পর্যালোচনা পূর্বক পরীক্ষা করে ফেলে এদতসংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করতে পারেন। ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর তারিখে জাতির উদ্দেশ্য প্রদত্ত প্রেসিডেন্টের ভাষনের ঘোষণায় যা বলা হয় তার আলোকে সংশোধিত প্রস্তাবলীর পর্যালোচনা করে দেখার পর কেবিনেট কমিটির রির্পোটটি পরবর্তী মন্ত্রী পরিষদ সভায় পেশ করা হয়। উক্ত রিপোর্টটি ১৯৭০ খৃষ্টাব্দের মার্চের ১৩ ও ২৬ তারিখে মন্ত্রী পরিষদ সভায় গৃহীত হয় এবং ২৬ মার্চ ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে চূড়ান্ত ভাবে অনুমোদন লাভ করে।

বাংলাদেশ আমলে গঠিত শিক্ষা কমিশনগুলো হচ্ছে-
১. ১৯৭৪: বাংলাদশে শিক্ষা কমিশন (সভাপতি: কুদরাত-এ-খুদা)
২. ১৯৭৯: অন্তবর্তীকালীন শিক্ষানীতিঃ জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ (সভাপতি: কাজী জাফর আহমদ/ আব্দুল বাতেন)
৩. ১৯৮৩: শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থাপনা কমিশন (সভাপতি : মফিজউদ্দিন আহমেদ)
৫. ১৯৯৩ : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক টাস্ক ফোর্স (সভাপতি: আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন)
৬. ১৯৯৭ : জাথীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি (সভাপতি : মোহাম্মদ শামসুল হক)
৭. ২০০০: জাতীয় শিক্ষা কমিটি
৮. ২০০২: শিক্ষা সংস্কার বিশেষজ্ঞ কমিটি (সভাপতি: মুহম্মদ আব্দুল বারী)
৯. ২০০৩ জাতীয় শিক্ষা কমিশন (সভাপতি: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা)
১০. ২০০৯: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯)


বাংলাদেশে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার হাল হকিকত ঃ
শিক্ষা, একটি জাতির জন্য সেই আলো স্বরূপ, যার কখনো নিভে যায় না। কিন্তু জঘন্য দৃপ্ততার সাথে জ্বলে তখন জাতিকে অন্ধকারে কথা মনেও করতে দেয় না। চলুন দেখা যাক, এ আলোর বাংলাদেশ কতটা আলোচিত।
বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৫৪%। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৪০২ জন। মোট শিক্ষক ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬৬ জন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ২৫ (সরকারী তথ্যমতে)। বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। নারী পুরুষ হিসাবে শিক্ষিতের হার যথাক্রমে ৪৮.৬% এবং ৪৯.১%।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষার অধিকার ঃ


সংবিধান হলো জাতির দর্শনস্বরূপ। দেশের জনগণের প্রত্যাশা, প্রত্যয়, আদর্শ ও মূল্যবোধ সংবিধানে প্রতিফলিত হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতিসত্ত্বার শিক্ষা সাধন এবং বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার ঘোষণার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে তা বাস্তবে রূপায়নের অন্যতম উপায় হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকৃত ও প্রতিশ্র“তি বিষয়।

এর প্রতিফলন সংবিধানের কিছু বিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবিধারেন অনুচ্চেদ ১৫, ১৬, ১৭, ১৯, ২৩, ২৮ ও ৪১ এ শিক্ষা সংক্রান্ত বিধানবলী বিধৃত হয়েছে। এবং এটাই হলো শিক্ষা বিষয়ক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল।

অনুচ্ছেদ (১৫) ক এ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ (১৭) ক একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের জন্য নির্ধারনী স্তর র্পযন্ত সকল বালক বালিকাকে তা বৈজ্ঞানিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান।

অনুচ্ছেদ (১৭) খ সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও সদিচ্ছায় প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টি।

অনুচ্ছে (১৭ ) গ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
অনুচ্ছেদ ২৮ (৩) কোন নাগরিককে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনরূপ অক্ষমতা বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।

তাই জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য সরকারকে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়ঃ-

১. শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ।
২. সময়ের সাথে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা সংগঠন পালন।
৪. শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনা ও পরামর্শ দান।
৫. পরিকল্পনা অনুযায়ী গৃহীত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ।
৬. শিক্ষার সমসুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৭. সময়োপযোগী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা।
৮. শিক্ষা তথ্য সরবরাহ ও গবেষণা কর্ম পরিকল্পনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা।
৯. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশী ও বিদেশির সাথে শিক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন।
১০. শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও যুক্তকরণ।

ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ সম্পর্কীয়
(হামুদুর রহমান) কমিশন রিপোর্ট, ১৯৬৬

প্রেক্ষাপট ঃ
১৯৫৯ সালের ২৩শে আগষ্ট পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশন তার রিপোর্ট জমা দেয়। এ কমিশন কর্তৃক পেশকৃত রিপোর্টের সুপারিশমালা পাকিস্তান সরকারি ১৯৬০ সালের ৬ই এপ্রিল অনুমোদন করে।ে ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে সুপরিকল্পমালার আলোকে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন শুরু হয়। এদিকে কমিশন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ সালের জুন মাসে পূর্ব পাকিস্তানে ও সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিম পাকিস্তানে অধ্যাদেশ আকারে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। সরকারিভাবে ঘোষণার পরই ১৯৬২ সালে প্রথম ভাগেই প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানে এবং কিচু পরে পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্র আন্দোলন জোরেশারে শুরু হয়ে যায়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তরে যে সংস্কার সাধন শুরু হয় ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনমূখী ছাত্ররা আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার লোকজনদের বিরুদ্ধে মুখোমুখী সংগ্রামে লিপ্ত হতে লাগলো। পুর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষাকমিশনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে পশ্চিম পাকিস্তানেইও। পাকিস্তানের উভয় প্রদেশে শিক্ষা কমিশনারে বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা ক্রমেই সরকারী বিরোধী রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে। সরকার অস্থিরতা সামলাতে গিয়ে তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রী পাস কোর্স পরিহার করতে বাধ্য হয়। ছাত্র আন্দোলনের প্রবল ঢেউ আঘাত হানে ঢাকা, করাচি, লাহোর পেশোয়ারে। ১৯৬৪ সালের ১০ই ডিসেম্বরে সর্ব প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১১ই ডিসেম্বর পেশোয়ারে ছাত্র পুলিশ এমনি সংকটময় মুহুর্তে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুলতানে ঘোষণা করেন যে, ছাত্রদের সমস্যা নিরসনের জন্য সরকার একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠন করবেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার এ কমিশন গঠন করেন এবং তাদের কর্ম পরিধি নির্ধারণ করে দেন।

কমিটি গঠন ঃ
পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৫ই সেপ্টেম্বর এর স্মারক নং এফ৯-৩/৬৪-ইু.ই-১ এর দরবারে ছাত্রসমস্যা ও কল্যাণ সম্পর্কিত কমিশন গঠিত হয়।

কমিটির সদস্য বৃন্দ ঃ

১. বিচাপরপতি হামমুদুর রহমান, বিচারপতি পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট- চেয়ারম্যান
২. বিচারপতি এম এ মাহমুদ, বিচারক, হাইকোর্ট, পশ্চিম পাকিস্তান-সদস্য
৩. কাজী আনোয়ারুল হক, চেয়ারম্যান, সেন্ট্রলি পাবলিক সার্ভিস কমিশন-সদস্য
৪. ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সদস্য
৫. নাসির আহমদ চেয়ারম্যান, পশ্চিম পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন-সদস্য

কমিটির কর্ম পরিধিঃ

ক. বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সের ধারা উপধারাগুলো সম্পর্কে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুণঃ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা এবং প্রয়োজনবোধে সংশোধন প্রস্তাব আনয়ন করা।
খ. শিক্ষাকার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে যে সব সুযোগ সুবিধা আছে তা খতিয়ে দেখা এবং প্রাপ্ত সম্পদের থেকে এর বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রস্তাবনা।
গ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য যে সব চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা এবং সামর্থের আওতায় প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা।
ঘ. ছাত্র জীবনকে আহত করে এমন সব বিসয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা।

সুপারিশমালা ঃ
১। শিক্ষার মাধ্যম শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষার মাধ্যমে হবে মাতৃভাষা
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেমন সরকারি অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়; তেমনি পাকিস্তানের বাংলা অঞ্চলের কলেজ সমূহের উন্নয়নের অর্থ সাহায্য প্রদানের সুপারিশ।
৩। বই পুস্তকের সরবরাহার্থে ব্যবস্থাপত্র জরুরী ভিত্তিতে ইংরেজী ও অন্যান্য ভাষায় লিখিত বই পুস্তক যথাসম্ভব বাংলার অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করার এবং তা সকল বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহ করা সুপারিশ করা হয়।
৪। চিকিৎসা শিক্ষা করাচীতে একটি নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ নিমার্নের বিষয়টি পরীকষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।
পূর্ব পাকিস্তানের ইতোমধ্যে স্থাপতি মেডিকেল কলেজ সমূহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরা।
৫। কৃষি শিক্ষা উভয় প্রদেশে কৃষি শিক্ষা বিস্তার কল্পে আরো কৃষি ও ভেটেরিনারি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এম.সি-সি ক্লাসের ভর্তির সিট সংখ্যা বৃদ্ধি নতুন বিষয় খোলা, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন পূর্ব পাকিস্তানে আরো একটি কৃষি কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
৬। নারী শিক্ষা বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন : মেয়েদের জন্য ভিন্ন কমন রূম ভিন্ন পরিক্ষা ভিন্ন বাথরুমের ব্যবস্থা করা; মেয়েদের কর্মজীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি পড়াবার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।
৭। মাদরাসা শিক্ষা মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিককরণ বৈজ্ঞানিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা, কেন্দ্রীয় ইসলামী গবেষণা কেন্দ্রের ও ইসলামী একাডোিমর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য বিশেজ্ঞ ও রিসার্চ স্কলার নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৮। ভোকেশনাল শিক্ষা ইতোমধ্যে স্থাপিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পূর্ণ বিশ্ববিদ্যাললে রূপান্তর প্রয়োজনীয় সাজসরঝ্হাম ও যন্ত্রপাতির যোগান নিশ্চিত করা পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাালয় থেকে ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করার পর ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন অনুসারে বি.এস.সি (টেক) পড়ার সুযোগ দান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দু সেশন খোলা পুরোপুরি সিমেস্টার পদ্ধতি চালু করা।
৯। হোটেল সমস্যা দূরীকরণ বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা দূরীকরণার্থে প্রয়োজনীয় হল ও হোস্টেলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
১০। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ঢাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার জগন্নাথ কলেজসহ অন্যান্য কলেজে নৈশকালীন এম.এ, এমএসসি এম কম পাঠদানের ব্যবস্থা।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি জেরা পর্যায়ের কলেজ সম্মান কোর্স খোল্বার ব্যবস্থা করা।
পূর্ব পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নতুন নতুন বিভাগ খোলা প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সাজসরঞ্জাম শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালরেৎদর গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি জেলা সদর সর্ব প্রকার ভৌত ও আঞ্চলিক সুবিধা একটি সরকারী ডিগ্রি কলেজ খোলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সুসংহত করা।


ইতিবাচক দিক ঃ

১. শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা কে গ্রহণ করা হয়েছে।

২. শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এ অঞ্চলে কলেজ সমূহের উন্নয়নে অর্থ সাহায্য প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

৩. এ অঞ্চলে ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজিতে দুর্বল। অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে একথা আরও সত্য। এ কমিশনের সুপারিশ জুরুরী ভিত্তিতে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় লিখিত বই পুস্তক বাংলায় অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এবং তা যথাশ্রীর্ঘই সকল বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।

৪. কৃষি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের কৃষি শিক্ষা বিস্তারকল্পে দেশের উভয় দেশে আরও কৃষি ও ভেটেরিনারি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

৫. যেসব প্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েরা একসাথে পড়াশোনা করে সেখানে ছাত্রীদের জন্য আলাদা আবাস ভিন্ন কমন রুম ভিন্ন পাঠ্যক্ষ্য ভিন্ন বাথরুম সৃষ্টি মেয়েদের কর্মজীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি পড়াবার সুযোগ সৃষ্টি করার বক্ষা বলা হয়েছে।

৬. মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও বৈজ্ঞানিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রচলিত মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগ্য বিশেষজ্ঞ ও রিসার্চ স্কলার নিয়োগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

৭. এ কমিশস ভোকেশনাল শিক্ষকের প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থাপিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরসহ অন্যান্য সাজসরঞ্জাম পূর্ণমাত্রায় যোগান দানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

৮. আবাসিক সমস্যা দূরীকরণার্থে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

৯. উচ্চ শিক্ষার উন্নতির জন্য ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার জগন্নাথ কলেজসহ অন্যান্য কলেজ নৈশকালীন এম.এ. এম.এস.এস ও এম.কম পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি জেরাে সদরে সর্ব প্রকার ভৌত আঞ্চলিক সুযোগ সুবিধা সহ একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজ খুলতে বলা হয়েছে। পূর্বপাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নতুন বিভাগগুলোর জ ন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

১০. কমিশন মতামত গ্রহণের নিমিত্তে প্রথম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে এমনকি যারা এ ব্যাপারে কমিশনের সাথে মত বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদেরকেও কমিশন মতামত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

 নেতিবাচক দিক

১. কমিশনের সদস্যদের ৫ জনের মধ্যে ১ জন ছাড়া বাকি ৪ জনই শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। ফলে তাদেরকে মূল সমস্যার ভিতরে ঢুকে তার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা ছিল তাদের পক্ষে খুবই দূরুহ কাজ।

২. কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিক। তারা অত্র প্রদেশের শিক্ষা বিষয়ক সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।

৩. এ কমিশনের সুপারিশে নারীশিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় নি। তাদের জন্য আলাদা কিংবা সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা বলা হয় নি।

৪. কৃষি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়া হলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করা হয় নি।

৫. চিকিৎসা শিক্ষার উপর গুরুত্বরোপ করা হয়নি। সপ্তম মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের দাবিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

৬. উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট বাস্তব সম্মত সুপারিশ গ্রহণ করা হয় নি।

৭. কমিশনের সুপারিশে প্রাথমিক শিক্ষার উপর কোনো সুপারিশ দেয়া হয় নি।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কাঠামো পুনগঠণের কথা বলা হলেও তার প্রয়োগিক দিককে উপক্ষো করা হয়েছে।

৯. শিক্ষানীতির কোনো দর্শন এখানে উল্লেখ করা হয় নি।

সমালোচনা:
মূলত এই শিক্ষা নীতি তৎকালীন পাকিস্তানের অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। এই শিক্ষানীতিতে কোন নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তরের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি। তবে কৃষি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলা আছে। মূলত ছাত্র আন্দোলনে প্রেক্ষাপটে হামুদুর রহমান শিক্ষাকমিশনটি তৈরি হয়েছিল যা কোন জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরীর জন্য যথপোযুক্ত ছিল না।





কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন(১৯৭৪ খৃষ্টাব্দ)

পটভূমি ঃ
পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শাসন ও শোষণ হতে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতার নবীন সূর্যের উদয় এদেশের মানুষের নবজীবন সৃষ্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনার তোরণ দ্বারা উন্মুক্ত করেছে। এই নবজীবন সৃষ্টির অন্যতম চাািবকাঠি যে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নিহিত, সে সত্য এদেশের মজনগণ দীর্ঘকাল পূর্বেই উপলদ্ধি করেন। এজন্যই শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। সাম্রাজ্যবাদী ঐপনিবেশিক শক্তিসমূহ তাদের নিষ্ঠুর শোষণের স্বার্থে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের পথে নানা প্রতি বন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। জনগণ ও ছাত্রসমাজ বারংবার এসব প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাই স্বাধীনতার নতুন প্রভাতে এই শিক্ষা ব্যবস্থার পূণগঠণ তাই জাতির সম্মুখে একটি মৌলিক দায়িত্ব রূপে দেখা দিয়েছে।

১৩৭৯ সনের ১১ শ্রাবণ (১৯৭২ খৃষ্টাব্দের ২৬ জুলাই) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ দেশের কৃষি সন্তান, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে ১৮ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা প্রশাসকদের নিয়ে এ কমিশন গঠিত হয়। এটি সঙ্গত কারণেই খুদা কমিশন নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এর প্রতি বেদনাটিও খুদা কমিশন রিপোর্ট নামে অভিহিত হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমিশনারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বর্তমান শিক্ষার নানাবিধ অভাব ও ত্র“টি বিচ্যুতি দূরীকরণ শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু জাতি গঠনের নির্দেশ দান এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান করার পথ নির্দেশের উদ্দেশ্যেই সরকার এই কমিশন নিয়োগ করেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণ ক্রমে আমরা কমিশনরে সভাপতির নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যগণ ১৯৭৩ সালের জানুয়ারী মাসে ভারতম সফর করেন প্রায় একমাস ব্যাপী এই সফরের তারা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মূলধন প্রত্যক্ষ াভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাছাড়া রিপোর্ট সম্পর্কে জনমত যাচাই ও করা হয় এবং দেশের অভ্যন্তরে পরিভ্রমণ করে সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

কমিশনরে গভীরে চিন্তা দীর্ঘ আলোচনা ও মতামত বিশ্লেষণের পর শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌছেছেন প্রায় চারশো জন্য সদস্য সম্বলিত ৩০টি অনুধ্যান কমিটি ও বিশেষ কমিটির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাবিদ ও সুধী সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ কমিশনের সুপারিশ পণয়নে সহায়তা করে।

সরকারি প্রস্তাবের নির্দেশ ক্রমে ১৯৭৩ সালের ৮ই জুন অন্তবর্তীকালীন রিেেপার্ট পেশ করা হয় এবং রিপোর্ট গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রদান করেন।

৩০শে মে ১৯৭৪ তারিখে ৩৬টি অধ্যায়ে বিভক্ত ৪৩০ পৃষ্ঠার (মুদ্রিত) এ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু দুভার্গের বিষয় ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু প্রায় সপরিবারে ও অনেক বিশ্বস্ত সহকর্মী সহ ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। প্রতিক্রিয়াশীলরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। তারা খুদা কমিশনরে রিপোর্টটিকে জনগণের মধ্যে প্রচারিত হতে দেয়নি।

কমিটির সদস্যবৃন্দঃ
মুহাম্মদ কুদরত-এ-খুদা
মোহাম্মদ ফেরদাউস খান,
এম ইউ আহমেদ মাহমুদ মোকাররম হোসেন,
মোহাম্মদ নুরুস সাফা এম আবদুস হক,
আনিসুজ্জামান,
নুরুল ইসলাম,
শামসুল ইসলাম,
আ. ম জহুলুল হক,
সিরাজুল হক,
বাসন্তী গুহ ঠাকুরতা,
মেহাম্মদ আবু সুফিয়া,
মুহাম্মদ নূরুল হক,
মোহাম্মদ হাাবিবুল্লাহ হেনা দাস,
মোঃ আশরাফ উদ্দিন খান।

কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখিত বিষয়সমূহ
অধ্যায় মূল বিষয় মূল বক্তব্য
১ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব মানবতা ও বিশ্বনাগরিক্ত নৈতিক মূল্যবোধ সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়ার শিক্ষা প্রয়োগ মুখি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুক‚লে কায়িক শ্রমের মর্যাদা দান,ম নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষা।
২ চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠণ শিক্ষার প্রত্যেক স্তরের ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতাকে জাগ্রত ও উন্নত করতে হবে।
৩ কর্ম অভিজ্ঞতা কর্মের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়া হবে এবং বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৪ শিক্ষার মাধ্যমে ও শিক্ষায় বিদেশী ভাষার স্থান শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা এবং ২য় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা থাকবে। অন্যান্য ভাষা শেখার জন্য ভাষা ইনিষ্টটিউট স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করা হয়েছে।
৫ শিক্ষক শিক্ষার্থীর হার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হার বিজ্ঞানসম্মত করতে হবে।
৬ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বিভিন্ন শিশুভবন উদ্যান ও গবেষণার জন্য শিশুশিক্ষা ইনষ্টিটিউট স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে।
৭ প্রাথমিক শিক্ষা ১ম থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা রূপে পরিগণিত করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা এবং অধিক সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করা বালিকাদের কাছে শ্কিষাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য।
৮ মাধ্যমিক শিক্ষা ৯ম-১২দশ পর্যন্ত শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তগর্ত করা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কলেজগুলোতে ডিগ্রী না খুলে ৯ম-১০ম শ্রেণীর খোলার সুপারিশ করা হয়েছে।
৯ বৃত্তিমূলক শিক্ষা বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য প্রমচুর যন্ত্রপাতি সামজসরঝ্হাম এবং বহু সংখ্যক পুস্তক ও জমা শিক্ষা সরবরাহক করে জন সাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত উন্নতির কথা বলা হয়েছে।
১০ ডিপ্লোমা স্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিদ্যা এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকতর ফলপ্র“সূ করার জন্য শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবভিত্তিক করার কথা বলা হয়েছে।
১১ মাদ্রাসা ও টোল শিক্ষা আরবি ও টোল শিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
১২ শিক্ষক শিক্ষণ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ও তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দেবার কথা বলা হয়েছে।
১৩ উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা খুলনা বিভাগে ১টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা গ্রন্থাগারের নাম উন্নয়ন, গবেষণাগার স্থাপন ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে।
১৪ ডিগ্রীস্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ্যা এ ধরনের শিক্ষার মান উন্নয়ন কথা বলা হয়েছে।
১৫ বিজ্ঞান শিক্ষা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বাধ্যতামূলক বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।
১৬ কৃষি শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি শিক্ষাকে প্রাধান্য দোবার কথা বলা হয়েছে।
১৭ চিকিৎসা শিক্ষা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ডাক্তার তৈরি করা।
১৮ বাণিজ্য শিক্ষা অফিস, আদালত, ব্যাংক, শিল্প কারখানা প্রভৃতিতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
১৯ আইন শিক্ষা স্নাতকের পর তিন বছরের এল এল বি কোর্স চালু করার সুপারিশকরা হয়েছে।
২০ ললিতকলা শিক্ষা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের এর জন্য অনুষদ খোলা চাকুরী অর্থনৈতিক মান ও তাদের সামাজিক মান যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
২১ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অধিকতর আধুনিক ও বাস্তবধর্মী হতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন ও যাচাই করা যায়।
২২ শিক্ষকদের দায়িত্ব মর্যাদা শিক্ষা দানের প্রধান ভূমিকা শিক্ষকই পালন করে বিধায় শিক্ষককে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে ও তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
২৩ নিরক্ষরতা দূরীকরণ বয়স্ক শিক্ষা ও অনুষ্ঠানিক শিক্ষা নিরক্ষরতা দূরীকরণে, নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তি ও মহিলাদের শিক্ষা দিতে হবে বিশেষ করে তাদের পেশাভিত্তিক শিক্ষা।
২৪ নারী শিক্ষা নারী শিক্ষা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
২৫ বিশেষ শিক্ষা শারীরিক ও মানসিক বাধাগ্রস্তদের জন্য এবং বিশেষ মেধাবীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
২৬ স্বাস্থ্য শিক্ষা, শরীরচার্চা ও সামরিক শিক্ষা প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে এগুলো থাকবো। এর প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ ও ব্যায়ামের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বছরে সাপ্তাহিক ছুেিট সহ ১২০দিন ছুটি থাকবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সময় ছুটি দিবে।
২৮ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক দেশের ও জগতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় উচ্চমানের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যপুস্তকের উন্নতি সাধন করতে হবে।
২৯ শিক্ষাগৃহ ও শিক্ষার উপকরণ শিক্ষা প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ রাখতে হবে। অধিক সংখ্যক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩০ গ্রন্থাগার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি গণগ্রন্থগার স্থাপন করতে হবে ও বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে।
৩১ শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার সমতাবিধান শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে ধনী দারিদ্র্য সকলে ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার সমতাবিধান করতে হবে।
৩২ ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দান ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান কর্মসূচী শিক্ষা ব্যবস্থার একটা অবিচ্ছেদ্য সঙ্গ হিসেবে পরিগণিত করার কথা বলা হয়েছে।
৩৩ ছাত্র কল্যাণ ও জাতীয়সেবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য কমমূল্যে পুস্তক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩৪ শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষা প্রশাসনকে বিদ্যমান ত্র“টি সমুহ দুর করতে হবে।
৩৫ শিক্ষার জন্য অর্থ সংস্থান শ্কিষা ব্যবস্থা প্রণয়ণের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। যার বিভিন্ন পথ তুলে ধরা হয়েছে।


ইতিবাচক দিক ঃ

১. শিক্ষা ব্যবস্থাটি প্রায় সকল দিক দিয়েই পরিপূর্ণ ছিল।
২. একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ণের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।
৩. বিজ্ঞান শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে যা বর্তমান শিক্ষানীতিতে দেয়া হয়নি।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
৫. খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
৬. বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কর্মঠ মানুষ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

নেতিবাচক দিক-

১. এই শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত এ কথা অনস্বীকার্য কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দেশে তখন এবং এখন এরূপ বিলাসবহুল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করার সম্ভব ছিলনা এখনও নেই।

২. মাদ্রাসা ও টোল শিক্ষাকে (অধ্যায়-১১) ব্যবস্থা এই শিক্ষা কমিশনে কম গুরুত্ব পেয়েছে।

৩. জ্ঞান অর্জনের চেয়ে শিক্ষাকে অধিক কর্মসূচী করার কথা বলা হয়েছে। যা কোন জাতির মেরুদন্ডের জন্য ক্ষতিকর।

৪. প্রাথমিক শিক্ষা যা মূলত শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য দেয়া হয় সেখানেও বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
৫. ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কিছু বলা হয় নি।

৬. শিক্ষা নীতি হবে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ কিন্তু সমাজতন্ত্র বাঙ্গালিজাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরক্ষেতার আদর্শ আর বাংলাদেশের সংবিধানের ভিত্তি নয়; যা শিক্ষানীতির এক প্রকার মূলনীতি।

৭. বিজ্ঞান প্রযুক্তির জ্যামিতিক অগ্রগতির ফলে বিশ্বে অনেক নতুন নুতন বিষয়ের উদ্ভব ঘটেছে এবং ইলেক্ট্রনিক্স কম্পিউটার সাইবারনেটিকস, জিনেটিকস ইত্যাদির কথা তখন কল্পনাও করা হয় নি।


সমালোচনা ঃ-
কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট নিঃসন্দেহে একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার স্মারক পত্র ছি ল। সেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আবেদন করা হয়। কিন্ত যুদ্ধোত্তর একটি দেশের জন্য তা কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। কারণ তখন আর্থিক সংকট সহ অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছিল দেশকে। সেই মুহুর্তে তখনকার উপযোগীও তুলনামূলক সুদূর প্রসারী একটা নীতি প্রণয়ন করার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ কর্মমূখী করার চেষ্টা একটা জাতির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ যা এখানে করা হয়েছে। ইংরেজি ব্যবস্থার উপর আরো জোর দেয়া দরকার ছিল। যেহেতু এটি আর্ন্তজাতিক ভাষা বিশ্বে সাথে তাল মিলানোর জন্য ইংরেজি ভাষার আবশ্যিবতা অন্বীকার্য। আবার শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সৎ, চরিত্রবান ও সকল মানবিক গুণে গুনান্বিত মানুষ সৃষ্টি আর ধর্মের প্রতি আনুগত্য ব্যতীত অ ন্য কোনভাবেই সৎ ও চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভবপর নয়, তাই ধর্ম শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে তার কিছুটা ঘাটতি দেখা গিয়েছে।

সব কিছুর পর অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণ বিদ্যালয়ে সার্বিক সুবিধার নীতি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় যা এই রিপোর্টে প্রণয়ন করা হয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

কিছু ত্র“টি থাকা স্বাভাবিক । এগুলো বর্তমান যুগোপযোগী করলে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন একটি আদর্শ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট।



মজিদ খান শিক্ষনীতি : ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

প্রেক্ষাপট
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের শিক্ষামন্ত্র্রী ড. আব্দুল মজিদ খান অত্যন্ত- নগ্নভাবে সাম্প্রদায়িক শিক্ষার প্রসার এবং সরকারি শিক্ষা সংকোচন নীতি অবলম্বন করে শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। প্রথম শ্রেণী থেকেই বাংলার সঙ্গে আরবি এবং দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজী অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি ভাষা বাধ্যতাম‚লক করা হয়। এসএসসি কোর্স ১২ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও শিক্ষার ব্যয়ভার যারা ৫০% বহন করতে পারবে তাদের রেজাল্ট খারাপ হলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়। ছাত্র ইউনিয়ন এই গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ছাত্র সমাজকে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারী শিক্ষানীতি বাতিল ও সামরিক আইন প্রত্যাহার দাবিতে স্মরণকালের বৃহত্তম ছাত্র মিছিল হয়। সেদিন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর ট্রাক উঠিয়ে দেয় এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী। শহীদ হয় দিপালী, কাঞ্চন সহ আরো অনেকে। শুধু শিক্ষানীতির আন্দোলন নয়, শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, ক−াসরুম সংকট নিরসন, সেশন জ্যাম নিরসন, শিক্ষার্থিদের ইউনিফর্ম নিশ্চিতকরণ, ক−াস শুরুর প‚র্বে এসেম্বলি, শিক্ষকদের জীবনমান উন্নতকরণ, স¡লম‚ল্যে শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিতকরণ, বিজ্ঞান গবেষণাগার- কম্পিউটার ল্যাব নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ শিক্ষা সংক্রান্ত- বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় আদোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নিরন্তর সংগ্রাম করে।

মজিদ খান শিক্ষনীতির সুপারিশমালা

বিষয় বিষয়বস্তু
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে কোন সমস্যা ও সংকট মোকাবেলার জন্য ভবিষত বংশধরদের জ্ঞান র্স্পহা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষানীদের প্রস্তুতকরন।
প্রাথমিক শিক্ষা সকল নাগারিকের জন্য কম্পক্ষে ৫ বছরের সার্বজনীন করা হয়ে এবং ভবিষ্যতে এটা ৮ বছরে করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাধ্যমিকশিক্ষা প্রস্তুতি স্তরের পরবর্তী পর্যায়ে ৪ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা করা। এতে চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ নবম-দশম শ্রেণীতে সমন্বিত শিক্ষা কর্ম প্রবর্তিত হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা উচ্চ মাদ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠসূচীকে ৫ টি প্রধান শাখার বিভক্ত থাকবে
ক) প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষন
খ) কারিগর
গ) সাধারন ও কারিগরি উভয় ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারন।
খ) ব্যবসা বানিজ্য ও ব্যবস্থাপনা
ঙ) নার্সিং
উচ্চশিক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম নির্বাচনে। এবঙ এর জন্য যোগ্যতার একটা নূন্যতম মান নির্ধারন
ক্রীড়া শিক্ষা প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত খেলাধুলা, **** কর্মসূচীর জন্য ৫ ঘন্টার কার্যক্রম প্রবর্তন করা।
ভোকেশনাল/কারিগরি শিক্ষা ভোকেশনাল ও ইনস্টিটিউট গুলো আগে শক্তিশালী করা ও নতুন ইনস্টিটিউট স্থাপন
শিক্ষকদের মান্নোয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্কিষকদের প্রশিক্ষন ও ভাষা শিক্ষা ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষাকদের মান্নোয়নের জন্য মুদ্রিত ও ইলেকট্রনিক উপাকরন ব্যবহারে প্রশিক্ষা দান।

ইতিবাচক দিক:

১. সরকারী খরচে প্রথমে ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য এবং ক্রমান্বয়ে সকল শ্রেণীর হবে।
২. বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও লেখাধুলার সরঞ্চামের ব্যবস্থা করা হবে।
৩. প্রথমিক শিক্ষদের জন্য দুই বছর প্রশিক্ষনের মেয়াদ বাড়ানো হবে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৫. বিদ্যালয়ে অভিভাগ শ্কিষক সমিতি গঠনে উৎসাহিত করা হবে। এব্যাপারে ১৯৮৬ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হবে।
৬. বিদ্যারয়ে নতুন পাঠপুস্তক প্রবর্তন করার পূর্বে পাঠ্যপুস্তকের প্রাক-নিরীক্ষা ও চুড়ান্ত মুল্যায়নের ব্যাপারে সকল বিদ্যালয়ের শ্কিষককে জড়িত করার জন্য কর্মসূচি তৈলি করা হয়েছে।
৭. সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর বিদ্যালয়ত্যাগী শিক্ষার্থী এবং বা দাতের পিতা মাতাদের সুযোগ প্রদনের জন্য কম্যুনিটি স্কুল প্রকল্পের মাধ্যমে ৫টি (২ টি মহিরাদের জন্য ও ৩টি পুরুষদের জন্য) বিভিন্ন ট্রেড কোর্সের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

নেতিবাচক দিক:

১. শিক্ষানীতিটির কোন সুনির্দিষ্ঠ দর্শন নেই
২. শিক্ষাস্তরগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা সুস্পষ্ঠভাবে উল্লেখ
৩. শিক্ষার মান্নোয়নের কোন সুনির্দিষ্ঠ দিক নিদেৃশনা নেই
৪. মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলা হয়নি।
৫. ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা বরা হয় নি।
৬. শিক্ষকদের মান্নোয়নের সুনিদিষ্ঠ দিক নির্দেশনা নেই।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি দূর করা হবে বলা হলে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা নাই।
৮. শিক্ষকদের সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো হবে তার দিক নির্দেশান নেই

সমালোচনা

প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে সামাজিক অর্থনৈতিক এবং শিল্প বানিজ্যের উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনবির্ন্যস্ত করা। বৃত্তি মুলক এবং কারিগরী শ্কিষাকে উৎপাদন পদ্ধতি ও বাস্তব পেশাসমূহের সংগে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করা হবে। বানির্জেক ভিত্তিতে শিক্ষা উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহ করার জন্য সরকার শিল্প স্থাপন করেন। এতদ্ব্যতীত নির্বাচিত মাধ্যমিক স্কুল গুলিতে খন্ডকালীন চাকুরীর সমন্বয়ে বৃত্তি মূলক লোর্সের প্রবতৃন করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বেশকিচু সংখ্যক জুনিয়ার টেকনিকাল স্কুল খোলা হবে। এই ক্যাক্টরীযুক্ত শ্খিসা প্রতিষ্ঠান গুলি যথাসময়ে দেশের শিল্প ্ন্নয়নের সহায়তা করবে।

দেশের সর্বত্র শিক্ষার জন্য মানের সমন্বয় সাধন একটি কাঠিন সমস্যা এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার সঠিক উন্নতি সম্ভব নয়। এই দূর শিক্ষণকে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম পত্র পত্রিকা ডাক, রেডিও টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন দূর দুরান্তে অবস্থানরত প্রাথমিক শিক্ষকগন শিক্ষার আধুনিক ভাবধারা। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের ভাষা শেখানো এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকদের শিক্ষকতার মানউন্নয়নে দূর শিক্ষণ সাহায্য করবেন।

শামসুল হক শিক্ষাকমিশন ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দ

প্রেক্ষাপট
শিক্ষাকে জাতীয় কল্যাণের চাবিকাঠি ও দল জনশক্তি সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন পুর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি। এ উপলদ্ধি থেকেই ১৯৭৪ সালের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পর আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অবশেষে ১৯৯৭ সাল তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৭৪ সালে প্রস্তুতকৃত কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি বাল্ব গণমুখী ও যুগোপযোগী শ্কিষানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এ লক্ষ্যে সরকার জানুয়ারী মাসে প্রফেসর এম শামসুল হককে সভাপতি করে ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে আরো দুজন কে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কমিটি কুদরত-এ-খুদা কমিশনের প্রতিবেদনকে গভীর ও নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে সেই প্রতিবেদনের বিভিন্ন প্রস্তাবসমূহকে যুগোপযোগী করার উদ্দেশ্য দেশের সর্ব প্রকার ও সর্বস্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাদি পরীক্ষা করে বিভিন্নমহলের মতামত গ্রহণ করে একটি বাস্তবভিত্তিক সুষ্ঠ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে এবং সেপ্টেম্বর মাসে তা অনুমোদনের জন্য দাখিল করে।

কমিটির সদস্য

১. চেয়ারম্যান ঃ অধ্যাপব শামসুল হক
সাবেক উপদেষ্টা

২. সদস্য সচিবঃ জনাব মুহঃ ফজলুল রহমান
ভারপ্রাপ্ত সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

সদস্যবৃন্দ ঃ
৩. ব্যারিষ্টার রাবেয়া ভূইয়া , সংসদ সদস্য
৪. মিসেস রাজিয়া মতিন চৌধুরী সংসদ সদস্য
৫. উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৬. উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৭. উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৮. উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৯. উপাচার্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১০. উপাচার্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
১১. উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
১২. উপাচার্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. উপাচার্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. উপাচার্য, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
১৭. অধ্যাপক আমিনুল হক, প্রাক্তন উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. ডঃ আব্দুল্লাহ আলমুতি শরফুদ্দিন
১৯. ডঃ মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, উপাচার্য ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
২০. অধ্যাপক ডঃ রশীদ উদ্দিন আহম্মেদ, নিউরা সার্জারী বিভাগ, স্তাতকোত্তর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ঢাকা।
২১. অধ্যাপক রশীদুল হক, প্রাক্তন, অধ্যাপক গণিত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২২. অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী
২৩. অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
২৫. অধ্যাপক ডঃ এম আলী আসগর
২৬. অধ্যাপক এইটএম জহরুল হক
২৭. ডঃ মাজহারুল ইসলাম
২৮. কাজী ফজলুর রহমান
২৯. জনাব ইকবাল সোবহান চৌধুরী
৩০. অধ্যাপক ডঃ দুর্গাদাস ভট্টাচার্য
৩১. জনাব ইউসুফ আব্দুল্লহ হারুন
৩২. ডঃ কাজী ফারুক আহম্মেদ
৩৩. অধ্যাপক ডঃ এম এ কাদেরী
৩৪. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিনিধি
৩৫. মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা।
৩৬. মহাপরিচালক, কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর
৩৭. মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
৩৮. মহাপরিচালক জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী
৩৯. চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকা।
৪০. চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহী।
৪১. চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা।
৪২. চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর।
৪৩. চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রাম।
৪৪. চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ঢাকা।
৪৫. চেয়ারম্যান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকা।
৪৬. চেয়ারম্যান কারিগরী শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা।
৪৭. দে জনাব মোঃ রফিকুল হক, প্রাক্তন মহা পরিচালক কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর
৪৮. রেজিষ্ট্রার বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ঢাকা
৪৯. অধ্যক্ষ মোঃ কামরুজ্জামান
৫০. মিঃ মুহাম্মদ মহাসেবা সচিব সংস্কৃতি ও পানি শিক্ষা বোর্ড
৫১. মিসেস হেনা দাস
৫২. অধ্যাপক মাহমুদুল্লাহ সরকার, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ।




ডাঃ শামসুল হক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ
অধ্যায় বিভাগ মূল বক্তব্য
অধ্যায়-০১ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমাজ সচেতন প্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞান শিক্ষার শিক্ষিত একটি জাতি গঠন।
অধ্যায়-০২ প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা মান সম্মত প্রাথমিক শ্কিষার চালু কল্পে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ধারার মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে তার অবসান ঘটিয়ে একই মান ও বৈশিস্ট্য সম্পন্ন একই ধারার শিক্ষা লাভ।
অধ্যায়-০৩ গণশিক্ষা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা নিরক্ষরতা দুর ও সেই সাথে সচেতনতা অর্জন ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন
অধ্যায়-০৪ মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর মেধার ও সমভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন কর্মজগতের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করা উচ্চ শিক্ষার জন্র প্রস্তুত করা।
অধ্যায়-০৫ বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি ও শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে জনসম্পদকে জনশক্তিকে রূপান্তর
অধ্যায়-০৬ মাদরাসা শিক্ষা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী এবং সেই সাথে ইসলামের যথার্থ সেবক ও বয়স্করূপে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা।
অধ্যায়-০৭ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর আচরনগত উৎকর্ষ সাধন ও জীবন ও সমাজ নৈতিকতার প্রয়োগনের মানসিকতা ও চরিত্র গঠন
অধ্যায়-০৮ উচ্চ শিক্ষা জ্ঞান সঞ্চারন ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ও সেই সমাথে দক্ষ জনসম্পদে গড়ে তোলা। বানিজ্যিক উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় নিষোধাজ্ঞা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সমন্বয়ের সাধন ও নেতৃত্ব প্রদানের স্বচ্ছ ও জবাব দিহিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা।
অধ্যায়-০৯ প্রকৌশল শিক্ষা সমাজের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি সম্পন্ন বাস্তবধর্মী দক্ষ প্রকৌশলী ও কারিগরী জনশক্তি গড়ে তোলা এবং দেশের বৃহৎ শিল্প গুলোর জন্য উপযুক্ত প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা।
অধ্যায়-১০ চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত মানের চিকিৎসা সেবক সেবিকা স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ তৈরি করা
অধ্যায়-১১ বিজ্ঞান শিক্ষা প্রাথমিক শুরু থেকেই শিশুরেদর বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত করান তাদের প্রতিভার বিকাশ জ্ঞানের সাধনা ও সৃষ্টিশীলতার মান অর্জন করানো।
অধ্যায়-১২ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও গুন সম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশ্কিষণ জনবল তৈরি।
অধ্যায়-১৩ কারবার (বা বিজনেস) শিক্ষা
অধ্যায়-১৪ কৃষি শিক্ষা পরিবেশগত শক্তি ও সম্ভবনার বিকাশ সাধন প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা ও আত্মকর্মসংস্থানে উদ্ধুদ্ধকরণ
অধ্যায়-১৫ ললিত কলা শিক্ষা মনের সুকুমার ব ৃত্তিকে জাগ্রত করা শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি করে পরিমিত ত্যাগ সম্পন্ন দক্ষ ও সুনাগরিক জনগোষ্ঠী ও সেই মসাথে তাকে পেশাভিত্তিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা নেয়া।
অধ্যায়-১৬ আইন শিক্ষা আইন শিক্ষার সার্বিক পুর্ণবিন্যাস ও আধুনিককরণের মাধ্যমে সুদক্ষ আইনজীবী আইন বিদ ও বিচারক তৈরি এবং জনগণের তাদের আইনগত অধিকার সংরক্ষনে সহায়তা করা।
অধ্যায়-১৭ নারীশিক্ষা নারীকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত ও সচেতনা ও প্রত্যায়ী হিসেবে গড়ে তোলা
অধ্যায়-১৮ বিশেষ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা একাউন্ট ও গার্লস গাইড প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠা শিশুকাল থেকে শিক্ষার্থীদের শারিরীক শিক্ষার শিক্ষিত করা শিশু কিশোর কিশোরীদের আত্মমর্যাদার সম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল, সেবাপরায়ন স্বাস্থ্য সচেতনা সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
অধ্যায়-১৯ গ্রন্থগার বিজ্ঞান উন্নত ও আধুনিক মানের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞান ও তথ্য সমহজলভ্য করা।
অধ্যায়-২০ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শিক্ষার সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষার্থীর সফলতা নিরূপন করা।
অধ্যায়-২১ মছাত্রকল্যাণ ও নিদের্শনা শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের অন্যায় সমাধান পড়ার খরচ লাঘব করা।
অধ্যায়-২২ শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাদের মানোন্নয়ন করা ও শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি করা
অধ্যায়-২৩ শিক্ষকের মর্যাদা অধিকার ও দায়িত্ব মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষকতার আগ্রহী করে তোলা ও তাদের মর্যদা ও সুযোগ সুুবিধা বৃদ্ধি।
অধ্যায়-২৪ শিক্ষাক্রম পাঠ্যসুচি ও পাঠ্যপুস্তক জাতীয় আদর্শ লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং সমজানীন চািেহদার প্রতিফলন ঘটে এমন শিক্ষাক্রম পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন
অধ্যায়-২৫ শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ
অধ্যায়-২৬ শিক্ষার শুরু নির্বিশেষে বিশেষ করে কয়েকটি পদক্ষেপ শিক্ষাকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখা কোচিং ব্যবসার নিয়ন্ত্রন ও অভিন্ন শিক্ষাঙ্গন পাঠ্যসুচি ও অন্যান্য নীতিমালার বাধ্যতামূলক অনুসরণ নিশ্চিত করা।
অধ্যায়-২৭ অর্থায়ন শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করা


ইতিবাচক দিক ঃ

১. শিক্ষার বাণিজ্যিক করণ রোধ। শিক্ষার প্রতি।
২. প্রাপক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ সৃষ্টি করা।
৩. প্রাথমিক শিক্ষা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা এবং সেই সাথে তা বাধ্যতামূলক ও সার্বজনীন করা।
৪. গণশিক্ষা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা চালুর মাধ্যমে নিরক্ষতা দূর করা।
৫. মাধ্যমিক শিক্ষায় বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৬. বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান
৭. মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার সাধন করে যুগোপযোগী করা।
৮. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান।
৯. জ্ঞানের সকল শাখার মধ্যে সমন্বয় সাধন ও মৌলিক গবেসণার উপর গুরুত্ব প্রদান।
১০. দেশের বৃহৎ শিল্পগুলোর জন্য উপযুক্ত প্রকৌশলী প্রযুক্তিবিদ তৈরির জন্য ঐ শিল্পগুলোর উপর কোর্স চালুসহ ফ্যাকাল্টি চালু করা।
১১. দেশের জনগণ তথা গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য বিশেজ্ঞ, সেবক সেবিকা ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সেবা পৌছে দেওয়ার জন্য অনুপ্রণিত করা।
১২. কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান।
১৩. চাকরির বিকল্প হিসেবে ব্যবসাকে উৎসাহিত করা।
১৪. সংস্কৃতিবান সুরুচিসম্পন্ন ঐতিহ্যসচেতন সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে গুরুত্ব প্রদান।
১৫. নারেিক শিক্ষা নিশ্চিৎ করনের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।
১৬. প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ।
১৭. জ্ঞানকে ও তথ্যকে সবার জন্য সহজ লভ্য করার উপর জোর প্রদান।
১৮. শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ
১৯. শিক্ষকদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা দান।
২০. আত্মনির্ভর শীলতা, দেশপ্রেম, নৈতিকমূল্যবোধ দৃষ্টি তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উদ্বুদ্ধকরণ
২১. প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণ পৃথক শিক্ষক নির্বাচনী কমিশন গঠন।
২২. পৃথক শিক্ষক নির্বাচনী কমিশন গঠন।

নেতিবাচক দিক ঃ

১. মৌলিক বিষয়ের চেয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান।
২. ইংরেজী শিক্ষার উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদান না করা।
৩. অভিন্ন শিক্ষাধারার কথা বলা হলেও দেখা যায় বিরাজমান বিভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার বিলোপ না করা।
৪. দেশের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া সম্পর্কে কোন কথা এখানে বলা হয়নি।
৫. এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঝরে পড়বে।
৬. মেধাবী ও প্রশিক্ষিত দের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের কথা বলা হলেও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আত্মত্যাগ সমৃদ্ধদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার করা বলা হয়েছে।
৭. মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার কথা বলা হলেও কাওমী মাদ্রাসাকে শিক্ষা ব্যবস্থার বাহিরে রাখা হয়েছে।
৮. দরিদ্র্য পরিবার সমূহের ছেলেমেয়েদেরকে কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ উদ্বুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আসলে তাদেরকে সাধারণ শিক্ষাগ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
৯৩. উচ্চ শিক্ষারক্ষেত্রে ভর্তি কি ও বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এর মানে দরিদ্র ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। আবার তারা যে বেতন ব্যবহার কথা বলেছে তার মধ্যে দিয়েও দারিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের মনে হীনমন্যতা বৃদ্ধি করা হয়। শিক্ষার ব্যয় বহন কতে হবে সরকারকে। তারা এ ভার দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর।
১০. বলা হয়েছে মহিলা শিক্ষকদের চাকরিতে নিয়োগসহ কোন ক্ষেত্রে বৈষম্য রাখা হবেনা। আবার বলা হেয়ছে সমযোগ্যতা সম্পন্ন মহিলাদের বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটা আসলে পরস্পর বিরোধী।

সমালোচনা ঃ
১৯৭৪ সালের কুদরত-ই-খুদা শিক্ষাকমিশনের উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি বাস্তব যুগোপযোগী ও গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য গঠিত হয় এই শিক্ষানীতি কিন্তু এই শিক্ষানীতি আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রণয়ন হলেও আর ওয়াসা সরকার এবং পরবর্তীতে বিএনপি সরকার এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেনি। এই শিক্ষানীতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষনের দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

শিক্ষানীতিই পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই-
এই শিক্ষা কমিশন মনে করেছে যে প্রাথমিক শিক্ষাটা অর্জন শ্রেণী পর্যন্ত হওয়া উচিত কিন্তু কিসের ভিত্তিতে সেই সুপারিশ করেছে তা স্পষ্টে হয়ে ওঠেনি। এ সম্পর্কে কোন গবেষণা ও চোখে পড়েনি।

এই শিক্ষানীতিতে কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি একটি ভালো দিক। কিন্তু কারিগরী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে উচ্চ শিক্ষাকে অবহেলা করা হয়েছে যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

মাদ্রাসা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবহার আরেকটি ধরণ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

শ্কিষা কমিশন রিপোর্ট তৈরিতে সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ করে জনগণের মতামত জেনে করা হয়েছে কিন্তু গবেষণা করে শিক্ষার কোন শুরে কি ধরনের কর্মকৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন বা কোথায় কী চাহিদা রয়েছে সেটি নিরূপন করা হয়নি।

নারী শিক্ষা গণশিক্ষা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বা শিক্ষানীতিকে আরও তৎপর্যই করেছে।

দেশের জনসংখ্যা সম্পদ ভবিষ্যত ইত্যাদি তারিখে নিকট ও দুরঅতীতে কোন সেক্টরে কী প রিমাণ জনসম্পদের প্রয়োজন হবে সে সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা রিপোর্টগুলোকে পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য শিক্ষানীতিতে শুধু সুপারিশ করা হয় সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়নের কিভাবে হবে সে কথা বলা হয়নি। কিন্তু এই শিক্ষানীতিতে সে কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষানীতিগুলো পর্যালোচনা করলে প্রতিটি শিক্ষানীতিরই কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে । কোন শিক্ষানীতিই পুর্নাঙ্গা পায়নি। তবে শামসুল হক বিজ্ঞানীকে পূর্বেকার অন্যান্য বিজ্ঞানীদের চেয়ে গ্রহন যোগ্য।

জাতীয় শিক্ষা কমিশন-২০০৩ (মনিরুজ্জামান মিঞা শিক্ষাকমিশন)

ইতিহাস ঃ
২০০২ সালের ২১শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যাবলি চিহ্নিত করে এর উন্নতিকল্পে একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মিঞাকে ১৫ জানুয়ারী ২০০৩ এ একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিশন গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিল চেয়ারম্যান সহ ২৪ জন। এরা হলেন: প্রফেসর ডঃ মোঃ মনিরুজ্জামান মিঞা, সচিব বৃন্দ শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশের সচিবালয় প্রফেসর ডঃ এস এম এ ফায়েজ, প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান (ভাইস চ্যান্সেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া) প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ আলী মুর্ত্তজা, প্রফেসর এম এ হাদী, প্রফেসর ডঃ এম শমসের আলী, ডঃ হাফিজ জি এ সিদ্দিকী, প্রফেসর ডঃ বজলুল মুবিয়া চৌধুরী প্রফেসর ডঃ ওয়াকিল আহমেদ প্রফেসর ডঃ মোঃ আসাদুজ্জামান জনাব আজিজ আহমেদ, চৌধুরী জনাব আব্দুর রফিক, প্রফেসর এম শরিফুল ইসলাম, প্রফেসর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষবৃন্দ, আলীয় মাদ্রাসা ও ভিকারুন্নেসা মুন স্কুল ঢাকা ইয়াসমিন মোর্শেদ সালমা খান, সরদার আলী মোঃ সেলিম ভূইয়া, এবং মোঃ আবদুল ওয়াহাব।

পরবর্তীতে ২০০৩ সালের মে মাসে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য হিসাবে যুক্ত করা হয়। জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখে কমিশনের একটি সভা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আহবান করা হয়, যেখানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং মিশনের ভবিষ্যতে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। কমিশনের পরবর্তী সভায় শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রনয়নের উপকমিটি গঠন করা হয়। চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রনয়নের নমুনা কাঠামো দাঁদ করান। চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ৩০টি মৌলনীতি সম্বলিত অপর একটি পরামর্শমালা বিতরণ করা হয়। এ নীতিগুলো কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সভায় আলোচনা করা হয় এবং কিছু সংশোধনীসহ গৃহীত হয়। প্রতিবেদন প্রনয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিশনের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন সময় এসব নীতি পরিশীলিত করেন এবং এগুলোকে চূড়ান্ত রূপ দেন। এ শিক্ষা কমিশনের গঠনও কর্মপদ্ধতি পূর্ববর্তী সকল শিক্ষা কমিশন হতে ভিন্ন ছিল। কমিশন দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশে কোন সফলে যায়নি। তবে কমিশনের সদস্যবৃন্দ তাদের জ্ঞান, দেশ বিদেশের বক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তাদের দূরদৃষ্টি সবকিচুই পূর্ণ ব্যবহার করেছেন। তবে ২০০৩ সাল ব্যাপী বিভিন্ন সময়ে যে সব শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্য যে সব ব্যক্তি নায়েমে প্রশিক্ষন গ্রহে ণর জন্য এসেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান সে সব প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে শিক্ষা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করেছেন। এ কমিশন সর্বমোট ১৫টি সভায় মিলিত হয়েছে।

মৌলিক নীতিসমূহ
এ শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনটি তিনটি অংশে বিভক্ত এবং ৫টি পরিশিষ্ট এতে সংযোজিত আছে। প্রথম অংশ সাধারণ শিক্ষা।
১. প্রাথমিক শিক্ষা, ২০। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, ৩। উচ্চ শিক্ষা।

দ্বিতীয় অংশ ঃ পেশাগত শিক্ষা
১. কৃষি শিক্ষা, ২. প্রকৌশল শিক্ষা, ৩. চিকিৎসা শিক্ষা।

তৃতীয় অংশ ঃ বিশেষায়িত শিক্ষা ।
১. মাদ্রাসা শিক্ষা, ২. নারেিক শিক্ষার মূল ধারায় আনয়ন ৩. তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা, ৪. শিক্ষায় দূরশিক্ষণ পদ্ধতি ৫. গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান শিক্ষন


এখন এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি ঃ

ক. সাধারণ শিক্ষা ঃ
১. প্রাথমিক শিক্ষা ঃ
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরেই শিক্ষারভীত রচিত হয়। তাই এ পর্যায়ের শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাথমিক শ্কিষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিশুর দৈহিক মানসিক সামাজিক নৈতিক মানবিক ও মান্দনিক বিকাশ সাধন করা । তাই বাংলাদেশের সরকার নির্ধারিত ২২টি উদ্দেশ্য কোনরূপ পরিবর্তন না করেই গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছর রাখার সুপারিশ করা হয়। এবং ৫ বছরের সকল শিশুকে বিদ্যালয় আনার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহীত হয়। এক্ষেত্রে ধর্ম-গোষ্ঠী, নারী,ম পুরুষ, অঞ্চল শিক্ষার মান ইত্যাদি কোন কিছুতেই যাতে ভেদাভেদ না থাকে সে ব্যাপারে সরকারের সাহায্য চাওয়া হয়। নতুন বিদ্যালয় স্থাপেনে বিদ্যালয়বিহীন দুর্গম ও নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

দেশে প্রচলিত ১১ ধরনের বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬ ধরনের বিদ্যালয়ের উপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, সেগুেেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারী, কিন্ডার গার্টেন ও পূর্নাঙ্গ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুরোকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনার কথা বলা হয়। দেশে যে ত্রিধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আেিছ তার সমতা আনয়নের লক্ষ্যে কয়েকটি পাঠ বিষয়ক মূল পর্চ্যি বিষয় বা ঈড়ৎব পঁৎৎরপঁষঁস হিসাবে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী ৮-১০ বছরের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ৩০ এবং পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে ১ঃ২৫ এ নামানোর যাতাও বলা হয়। আর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নতুন ধারনা প্রবতর্নের সুপারিশ ও করা হয়। এচাড়া নিরপ্কেষা কর্ম কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নির্বাচন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুসারে বেতন স্কেল নির্ধারণ পেনশন গ্রাচ্যুয়িটি ইত্যাদি পাওনা অবসরের তিন মাসের মধ্যে নিস্পত্তির এবং ১১ সদস্য বিশিষ্ট স্কুল পরিচালনা পর্যদের সদস্য সংখ্যা ১৩তে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়।


২. মাধ্যমিক শিক্ষা ঃ
মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণ পক্ষপাতীভাবে শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষকের আচরণ তাদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করা শিক্ষাা ব্যবস্থাকে মাধ্যমিক স্তরে প্রচলনের সুপারিশ করা হয়। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ছাড়া সাধারন বিজ্ঞান ইতিহাস, ভূগোল, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়ক কোর্স অন্তভূক্তির প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া দেশ সমাজ সংস্কৃতি ও কর্মসংস্থানের বিষয় বিবেচনা করে কতগুলো ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রস্তাব করা হয়। শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অধিকার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান, প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব জাতীয় শিক্ষাক্রম বোর্ড (এন সি টি বি) এর হাতে রাখার প্রস্তাব করা হয়। শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষকের ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ উন্মুক্ত করা শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো শিক্ষকদের জন্য পেনশন গ্র্যাচ্যুইটির ব্যবস্থা মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ১ঃ৪০এ রাখার ব্যবস্থা কোচিং সেন্টার ও নোট বই নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। শিক্ষকতা পেশায় দক্ষতা অর্জনের জন্য চাকুরি পূর্ব ও চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং এর আধুনিকীকরণ ও মানোন্নয়নেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ মাদ্রাসা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ধারায় বাংলা ইংরেজি গণিত ও বিজ্ঞানের সমমানের পাঠদানের ব্যবস্থা করা এবং উচ্চমানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একদাশ দ্বাদশ শ্রেণী সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। দশম শ্রেণীর পর এস এস সি পরীক্ষাম গ্রহণ এবং প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে ২৫% নম্বর স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে। কোন শিক্ষার্থী এস এসে সি পরীক্ষায় একেবারে উত্তীর্ণ না হতে পারলে তাকে তিন বৎসরেরে মধ্যে অকৃতকার্য বিষয়গুলো পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। শিক্ষার মাধ্যমে হবে বাংলা তবেই ইংেরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ভূগোল পড়াতে হবে। শিক্সাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও দরিদ্র্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


৩. উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ঃ
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষের অভাব শিক্ষকের অভাব অনেক প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের পদশূন্য থাকা সহ অনেক সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায় যেহেতু উচ্চ শিক্ষার ভিত্তি তাই শিক্ষার্থীর মেধা, আগ্রহ প্রবণতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনানুযায়ী বহুমূখী শিক্ষাক্রমের যে কোন একটিতে অংশগ্রহণ করতে পাররবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ ৪০ রাখা প্রয়োজন বলে উল্লেক করা হয়। শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন ও পাঠদানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়। মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী বেসরকারী কলেজে শিক্ষক নিয়োগের উপর পৃথক কর্মকমিশন গঠন করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামীলক ও পরবর্তীতে সজ্ঞীয়সী প্রশিক্ষন কোর্স চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ধাপটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে না রেখে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে অধ্যায়নের সুযোগ পাবে যাতে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। গভর্নিং বডি থেকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থকে দূরে রাখতে হবে। যথেষ্ট সংখ্য রেফারেন্স বই এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও গ্রন্থ্গাারিকের পথ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেকটি কলেজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্রাবাস ও কলেজের আশেপাশে শিক্ষকদের আবাসনের ব্যবস্থাও নিশ্চিতকরণ রাখা হয়।

৪. উচ্চ শিক্ষা ঃ
এ পর্যায় উচ্চ শিক্ষার কাম্য মান অর্জিত না হওয়ার পেছনে ছাত্র ছাত্রীদের ভাষাজ্ঞানের অভাব, বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার বিপর্যয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ও মানসিক প্রস্তুুতির অভাব শিক্ষা শেষে চাকুরি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা শিক্ষাঙ্গনে সামগ্রিক উপক‚ল পরিবেশ ইত্যাদি কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার মান সুসংহতকারনের উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্র ভর্তির পর প্রথম ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের জন্য তাদের উপযোগী করে তুলতে হবে। তাদের লেখাপড়ার আকৃষ্টি করার জন্য শিক্ষা বর্ষের প্রথম থেকেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রদান ক্যালেন্ডার অনুসরনের প্রয়োজনীয় ব্যবসথা গ্রহণ এবং বিভাগীয় কার্যক্রম সুসংহত করার বিসয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্ত্বশাসন আইন বলবৎকার ত এ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রমের বিশাল এক সমসম্যা হল সেশন জ্যাম। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিধারিত বন্ধ ভর্তি পরিক্ষার বিলম্ব সময়মত পাঠ্যসূচী সমাপ্ত না করা, ছাত্রদের পরীক্ষা পেছানোর দাবি পরীক্ষা গ্রহণে দীর্ঘ সময় ব্যয় পরীক্ষার ফল প্রকাশে অস্বাভাবিক বিলম্ব ইত্যদিকে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু সাবসিডিয়ার পরিবর্তে সম্ববিত পদ্ধতির প্রচলন চার বছরের স্নাতক (সম্মান) কোর্সের প্রচলন ও শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতির পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রচলিত বাৎসরিক কোর্স পদ্ধতি চালু রাখা বিভাগে অন্য বিষয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি রহিত করা চার বছরে অনার্স কোর্স চালু রাখার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়। মাষ্টার্স পর্যায়ের পূর্ণ নম্বরের অর্ধৈকম হবে লিখিত এবং বাকি অর্ধৈক হবে গবেষণামূলক ও রচনাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে আলোচনাক্রমে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মাস্টার্স কোর্সের অনুমতি দেয়ার পূর্বে এর অবকাঠামো সুবিধা গ্রন্থাগার গবেষণামায় ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের বিষযটি যাচাই ধেকার সুপারিশ করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্ক্ষিকদের জন্য ংঁসসবৎ পড়ঁৎংব এম ফিল ও পি এইচ ডি কোর্স চালুর পরামর্শ দেয়া হয়। মূলকথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রকৌশল, রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি সমাজ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা আইন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে জ্ঞানের রাজ্যের এক বর্ণালী প্রতিষ্ঠান। পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাদান যুগপোযোগী করে তোলা বিজ্ঞান বিষয়ে জাতীয় শিক্ষার মানদন্ড প্রস্তুত করা তরুন শিক্ষদের জন্য মফস্বলে আবাসনের ব্যবস্থা বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের জন্য মোবাইল ভ্যানের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মদ্যে নেটওয়াকিং এর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজ্ঞান পার্ক ও নভোথিয়েটার স্থাপন টিভি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম চালু ভৌত বিজ্ঞানের অলিম্পিয়ার চালু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ বিষয়ে সেন্টার অব একসে লেনস স্থাপন প্রতিটি কলেজ ও স্কুলে কম্পিউটার ল্যাবরেটরি স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।


খ. পেশাগত শিক্ষা ঃ

১. কৃষি শিক্ষা ঃ
বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কৃষি শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম খাদ্য খাটতি নিরসন বাম সংখ্যক জমিতে অধিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যের যোগান ইত্যাদি। সমস্যা চিহ্নিত কল্পে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসাবে পড়ানো সমীচিন মনে করা হয়। কৃষি প্রশিয়াম ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমাপ্রাপ্তদের মেধার ভিত্তিতে কৃষিতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইরড় ঃবপযড়হড়ষড়মু মবহবঃরপং ঊহমরহববৎরহম, গড়ষবপঁষধৎ ঃবপযহরয়ঁবং, ঞরংংঁব পঁষঃঁৎব ইত্যাদি বিসয়ে মৌলিক গবেষণা সম্পাদনের জন্য একটি আধুনিক গবেষণার স্থাপন করা যেতে পারে যা সকল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া কৃষি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে অভিন্ন কারিকুলাম চালুর কথা ও বলা হয়। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ঈড়ঁৎংব পৎবফরঃ ংুংঃবস এবং মূল্যায়নের জন্য জিপিত্র পদ্ধতির চালুর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব চালুর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব ও আনীত হয়। ইন্টারশিপ বা ফার্থ এ্যাকটিসের প্রতিও গুরুত্বরোপ রাখা হয়। সর্বোপরি জাতীয় গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের সম্নবয় সাধনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়।

২. প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ঃ
এক্ষেত্রে সুপারিশসমূহ হলো ঃ প্রকৌশলী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২০ সালে মধ্যে ২০% উন্নীতকরণ বৃত্তিমূলক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকুরি করার সুযোগ প্রদান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ১৫তে উন্নীতকরণ সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা টি টি সিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপর স্নাতকোত্তর কোর্স চালুকরণ এবং ছাত্রদের ইন্টাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট কার্যক্রম পরিচালার ব্যবস্থা গ্রহণ মাস্টার ক্রাফটস ম্যান এবং মাস্টার টেকনিসিয়ান হিসাবে জাতীয় স্বীকৃত দান এবং ইঞ্জিনিয়ার রিচার্স কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব ও আনা হয়।

গ. বিশেষায়িত শিক্ষা

১. মাদ্রাসা শিক্ষা ঃ
সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় মাদ্রাসহা শিক্ষাব্যবস্থার ও একই সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ বিনামূল্যে পাঠ্য প ুস্তক প্রদান হিসাব শাখাকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার স্থানান্তরের ব্যবস্থা ৮ম শ্রেণীর বৃত্তির ব্যব্স্থা পরিবর্তন করে মাধ্যমিক স্কুলের অনুরপরাগ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম ও টেক্সট বোর্ড উইং শক্তিশালী করণ মাদ্রাসা প্রধানদের জন্য শিক্ষা প্রমাসন ও ব্যবস্থাপনা কোর্স প্রবর্তন মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা বি সি এস (মাদ্রাস শিক্ষ প্রর্বতন ইত্যাদি বিষয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে।
২. নারীকে শিক্ষার মূলধারায় আনয়ন ঃ
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী নারী শিক্ষা উন্নয়নে গৃহীত পূর্ববর্তী সকল পদক্ষেপ বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির হার উল্লেখ যোগ্য মাত্রার বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়েদের শ্কিষা সম্পর্কিত তথ্যাদি ছাত্র ছাত্রীদের আনুপাতিক হার পৃথক করার উপর গুরুত্বরোপ করা হয়।

৩. তথ্যপ্রযুক্তি ঃ
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত নীতির কার্যকর বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রাথমিক ভাবে সরকারী কাজগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে তাদের সাথে বাংলাদেশের পড়সঢ়ঁঃবৎ এৎধফঁধঃব দের সম্পৃক্ত করে দেশীয় বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি যারা সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে অফিস ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অঁঃড়সধঃরড়হ এর আওতায় এনে ওঈঞ ঝবপঃড়ৎ কে দেশের মধ্যে উৎসাহিত করা পরবর্তী পর্যায়ে ঐরময ংঢ়ববফ পড়সসঁহরপধঃরড়হ নধপশনড়হব এর মাধ্যমে বিদেশের কাজগুলোকে নিয়ে আসা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের স্বল্পকালীন সময়ের জন্য দেশে আমন্ত্রণ ও কম্পিউটার ডিগ্রিপ্রাপ্ত চাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।

৪. শিক্ষার দূরশিক্ষণ পদ্ধতি ঃ
বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বিস্তৃত অবকাঠামো তৈরি করে স্বাক্ষররতা অভি যান জনগণের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসচেতনা বৃদ্ধি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণদান অব্যাহত শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাবে। এর সাথে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট মাধ্যমে শিক্ষাদান করা এবং একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর সমাজ গঠনের প্রয়াস চালানোর যেতে পারে।

৫. গ্রন্থাগার শিক্ষা ঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ হাজার পুস্তক সম্বলিত পাঠাগার স্থাপন এবং তার ব্যবস্থাপনায় একজন শিক্ষক কেত প্রশিক্ষণের ব্যব্সতা চঞও গুলোতে জনবল কাঠামোসহ গ্রন্থাগাারের বৗবস্থা নো (ইঅ চঊ) এ জাতীয় মানের একটি গ্রন্থাগার পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ মাধ্যমিক পযার্য়ের সরকারি ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরেত প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো সৃষ্টিসহ একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক লাইব্রেরী ও গবেষণা গ্রন্থাগার গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষিত জনবল আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্বলিত উন্নত মানের গ্রন্থাগার সুবিধাাদি সৃষ্টির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার উল্লেখ করা হয়।

ইতিবাচক দিক ঃ
১. একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা চালুকরণ।
২. মৌলিক শ্ক্ষিাক্ষেত্রে সমবন্টনের নীতি অ নুসরণ
৩. শ্ক্ষিার বিভিন্ন ধারার মধ্যে সম্বনয় সাধন
৪. গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃতকরণ।
৫. শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণদানের উপর গুরুত্বারোপ।
৬. শিক্ষায় প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহারের উপর গৃরুত্ব
৭. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনমূখী শিক্ষার ব্যবস্থা।
৮. শিক্ষিত বেকার শ্রেণী রোধে পরিকল্পনা প্রণয়ন
৯. শিক্ষার দূরশিক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার জোরে প্রদান
১০. মাধ্যমিক ও কলেজ শ্ক্ষিার ক্ষেত্রে ঢাকা কেন্দ্রিক প ্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ।
১১. একক বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পিরুৎসাহ প্রদর্শন
১২. বেসরকারী পর্যায়ে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
১৩. পবহঃবৎং ড়ভ ঊীপবষষবহপব স্থাপন এবং পেশাগত ও বিশেষায়িত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ও
১৪. শিক্ষক নিয়োগে নিরপেক্ষা প্রশাসন স্থাপন।
১৫. বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি গুরুত্বরোপ
১৬. স্থায়ী শ্ক্ষিা কমিশন গঠনের প্রসঙ্গ উত্থাপন
১৭. প্রযুুক্তির ব্যবহার অব্যাহত শিক্ষাদান ব্যবস্থা
১৮. কোচিং সেন্টার ও নোট বই নিষিদ্ধকরণ
১৯. কৃষি শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্বরোপ।

নেতিবাচক দিক ঃ
১. শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জনগণের জ্ঞানের ক্ষুধা নির্ধারণ ও জীবন যাত্রা উন্নতকরনের বদলে জনগোষ্ঠীকে স্বল্প স্বাক্ষরের মধ্যে সম্পদে পরিণত রাখার উপর গুরুত্বরোপ।
২. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাক্ষেত্রে সেমিষ্টার পদ্ধতির বদলে বাৎসরিক কোর্স প্দ্ধতি চালা রাখা।
৩. মাদ্রাজ শিক্ষাব্যবস্থা ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য দূরীকরন বোবলা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির উপর গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার যে বিশাল ব্যবধান বিশেষত ইংরেজি শিক্ষার তার উপর কোর্স আলোকপাত করা হয়নি।
৪. নারী শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত সরকারী পদক্ষেপকেই যথেষ্ট বলে মনে করা হয় তার চেয়ে অধিক উত্তম কিছু নারীকে শিখতে দেয়ার সুযোগকে এখানে একারুপ দুরে রাখা হয়েছে। যা মোটেই উচিৎ নয়।
৫. শিক্ষানীতি প্রণয়নে কথিটির সদস্যদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক জ্ঞানের প্রধান্য।

সমালোচনা ঃ
২০০৩ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা এর প্রতিবেদন অনুযায়ী একমুখী শিক্ষাতে গুরুত্বরোপ করা হলেও কি কি কাঠামোর মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করা হবে এর কোন সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। কারিগরি শিক্ষার উপর অধিক সরকারী সাহায্য চাওয়া হয়েছে কিন্তু তা শুধুমাত্র দেশের অর্থনীতি মজবুত করার লক্ষ্যে যাতে দক্ষ করিগর তৈরি হবে কিèুত মেধার বিকাশ ও জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে না। নারী শিক্ষাকে এর যথাযথ গুরুত্বের দানের ক্ষেত্রে এ শিক্ষানীতিতে ঘাটতি রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশে নয় বরং উত্তম পার্থিব জীবন লাভের উপরই গুরুত্বরোপ করেছে। কারিগরি শিক্ষাকে সমৃদ্ধকরণে জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কেবল বিদেশে যেমন শ্রম দিতে পারে সেজন্য দেশীয় কাঁচামাল ও সুযোগ সুবিধার ব্যবহার হয় সে কারণে নয় অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় বিদেশের জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে দেশের উন্নয়নের সেবক নয়। এ শিক্ষানীতিতে অনেকগুলো যুগান্তকারী প্রস্তাব করা হলেও এর সম্ভবনা ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে বস্তনিষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত সংযোজিত হয়নি। এর কারণ আমার মতে যেহেতু শিক্ষানীতি প্রণয়ন কথিটি সরেজমিনে দেশে বিদেশে কোথাও সফরে যায়নি। তাই এরূপ তথ্য জানা সম্ভব হয়নি অর্থাৎ ব্যক্তি কেন্দ্রিক জ্ঞানই এক্ষেত্রে মুখ্য ছিল এবং বস্তনিষ্ঠতার ঘাটতি রয়েছে।


জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (কবির চৌধুরী শিক্ষাকমিশন)

ইতিহাস

মহাজোট সরকারের প্রধান শরিকদল আওয়ামীলীগের ২০০৮ সালের নির্বাচন ইশতেহার অনুযায়ী একটি অসম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো একাট সুপরিকল্পিত এবং জনকলানে বিবেচিত যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা। আর তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন একটি সুষম সুগ্রন্থিত যুগযোপযোগী শিক্ষানীতি।

এমনি একটি শিক্ষানীতি প্রণঢনের জন্য সরকার কোন কমিশন তৈরি করেন নি তৈরি করেছেন একটি কমিটি। এই কমিটিকে শিক্ষানীতি ২০০০ কে অধিকতর সময়োপযোগী করে পুণগঠন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কমিটি তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ৫৬টি সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন এবং অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছ তেকে লিখিত মতামত ও গ্রহণ করেন। ৮ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির ঘোষণা দেন।

সরকার কমিটিকে কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাও বেঁধে দেয়। কমিটি ৩রা মে ২০০৯ তারিখে প্রথম মিটিং এ বসে এবং ২রা সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে এর কাজ সম্পন্ন করে।ে বিভিন্ন উৎস থেকে মতামত ও তথ্য গ্রহণ ও বিবেচনা এবং সদস্যদের নিজেদের মতামত তুলে ধরার জন্য পূর্ণ কমিটি মোট ২৩টি সভা করে।

প্রাপ্ত সকল মতামত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে একটা খসড়া শিক্ষানীতি তৈরি করা হয় এবং এর পরিমার্জন করার পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কমিটির কো চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমানা আহমদ (আহবায়ক) সদস্য মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও সদস্য সচিব শেখ ইকরামুল কবিরকে নিয়ে গঠিত খসড়া প্রণয়ন এ কমিটি।

শিক্ষানীতি ২০০৯ এ রয়েছে ২৯টি অধায় সাতটি সংযোজনী মোট পৃষ্ঠা সংখর্শ্যা ৯৭। প্রত্যেক অধ্যায়ে উদ্দেশ্য লক্ষ্য এব ং বাস্তবায়ন কৌশল উপস্থাপন করা হয়েছে পাশাপাশি শ্কিষার স্তর নিবিশেষে প্রযোজ্যগ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকনির্দেশনা ২৮ নং অধ্যায়ে সন্নিবেশিত আছে।

শিক্ষানীতি সম্পর্কে জনমত যাচাইয়ের জন্য ওয়েবসাইট পিতি এক্ষ করে দেওয়া হলেও ফন্ট সংযোজন করা হয়নি। তাই যাদের কম্পিউটারে ব াংলা ফণ্ট নেই তাদের শিক্ষানীতি পড়ার কোন উপায় নেই খসড়াটি প্রকাশিত হলে ২ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়-

ক) একে গ্রহণ করেছে এবং তা পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কী কী সংযোজন বা পরিবর্তন করা যায় তা সুপারিশ করেছে।

খ) একে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটিতে মোট ১৮ জন বিজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছেন চেয়ারম্যান-জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।
কো-চেয়ারম্যান-ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ, সভাপতি-বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
সদস্য সচিব- অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির।
সদস্য-
অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ
প্রফেসর আর আই এম আমিনুর রশিদ
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম
অধ্যাপক-মুহঃ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম
অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান
অধ্যাপক ড. জরিনা রহমান খান
অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সীত্রধর
অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সূত্রধর
অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ
জনাব মোঃ আবু হাফিজ
মাওলানা অধ্যাক এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান
বেগম নিহাদ কবির
অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী
প্রফেসর শাহীন মাহবুবা কবির

গঠিত ১৮ সদস্যের এই কমিটিকে সহায়তা করার জন্য যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহায়তা সেবা প্রদান করেছেন তারা হলো-
নাম, ঠিকানা পদবী সহায়তা সেবক
১. এ কে এম মুনিরুল ইসলাম
সহকারী পরিচালক নায়েক র‌্যাপোটিয়ার
২. ফরহাদুল ইসলাম ভূইয়া
প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ নায়েক র‌্যাপোটিয়ার
৩. মোঃ দাউদুল ইসলাম
বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ শব্দ বিন্যাস
৪. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস
ব্যক্তিগত সহকারী নায়েক শব্দ বিন্যাস
৫ মোঃ আলমগীর হোসেন
এম এল এস এস নায়েক এম এল এস এস

শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশিত হবার পর শিক্ষামন্ত্রী ২রা সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসের ৪৭ তম বার্ষিক আয়োজনের সম্ভবনা নামক নিবন্ধে বলেছেন আমাদের শিক্ষার অধিকার এবং গণমুখি বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক যুগোপযোগী প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতির জন্য অর্ধ শতাব্দী ধরে যে সংগ্রাম অব্যাবহতভাবে চলমান তারই সফল পরিণতি হলো এবারের শিক্ষানীতি।


জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ -এর সুপারিশমালা
অধ্যায় মূল বিষয় মূল বক্তব্য

১ শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নের প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল যুক্তবাদী নীতিবান নিজের ও অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কুসংস্কার মুক্ত পেরামত সহিষ্ণু অসাম্প্রদায়িক দেশ প্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা।
২ প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আগে প্রয়োজনীয়তা মানসিক ও দৈহিক প্রস্তৃতি গ্রহণের পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষা হবে সার্বজনীন বাধ্যতামুলক অবৈতনিক এবং সকলের জন্য একই মানের
৩ বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের মধ্যে প্রাপ্ত সকল নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা এবং শিশু শ্রমিকদের শিক্ষার সুুযোগ প্রদান
৪ মাধ্যমিক শিক্ষা নবম দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমে শিক্ষাস্তর বিবেচনা করা
৫ বৃত্তিমুলক ও কারিগরি শিক্ষা দেশের ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনার রেখে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা।
৬ মাদরাসা শিক্ষা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আঠুনিকরণ
৭ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা যার যার নিজস্ব ধর্মের ওপর এবং সেখানে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা।
৮ উচ্চ শিক্ষা জ্ঞান সঞ্চারণ ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ও সেই সাথে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা
৯ প্রকৌশল শিক্ষা দেশের শিল্প সমস্যা সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপনের উপর জোরদার করা হয়েছে।
১০ চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা এবং তাদের সংবেদনশীল বিবেকমান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা
১১ বিজ্ঞান শিক্ষা শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশ জ্ঞান সাধনা এবং সৃজনশীলতায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সহায়তা করা
১২ তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা উপযুক্ত কর্মযজ্ঞের জন্য তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার আর্ন্তজাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা করা।
১৩ ব্যবসায় শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ব্যবসার বাণিজ্যূ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন সফল তৈরি ও শিক্ষা জীবনের যে কোন স্তরের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্র আত্মকর্মসংস্থান পথ সুগম করা
১৪ কৃষি শিক্ষা কৃষি নির্ভর আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সম্প্রসমারণ ও বৃষ্টিতে আধুনিক প্রযুুিক্তর ব্যবহারে সচেতনা সৃষ্টি করা।
১৫ আইন শিক্ষা জনগণের আইনগত অধিকার সংরক্ষণে সহায়তা করা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুদক্ষ শিক্ষা আইনজীবি আইনবিদ ও বিচারক তৈরিতে সাহায্য করা
১৬ নারী শিক্ষা নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা
১৭ ললিতকলা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মনের সুকুমার বৃত্তিকে জাগ্রত করে মন ও কর্মে শৃঙ্খলাবোধ সৃেিষ্ট করে পরিমিত জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ এবং সুনাগহরিক জনগোষ্ঠী তৈরি করা
১৮ বিশেষ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা স্কাউট ও গালর্স গাইড এবং ব্রতচারী
ক. প্রতিবন্দীদের শিক্ষা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ
খ. স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা শরীর চর্চা ও খেলাধুলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি আবশ্যিক বিষয় এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
গ. ব্রতচারী ব্রতচারীর শিক্ষাকে নাগরিক হওয়া শ্রমজীবি মানুষকে সম্মান করা অসাম্প্রদায়িকতা অনুশীলন করা অসাম্প্রদায়িক হওয়া দেশ গড়ার কাজে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানো ও মানুষের সেবা করা
১৯ ক্রীড়াশিক্ষা ক্রীড়া শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়ে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদ তৈরি করা।
২০ গ্রন্থাগার স্কুল কলেজ গুলোতে আধুনিক ও উন্নতমানের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও পর্যায়কুমে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সুবিধা প্রদান
২১ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন জ্ঞান অর্জন সম্পর্কিত মূল্যায়ন ধারাবাহিকভাবে করা উচিত এবং এক্ষেত্রে কিছু নিয়নতান্ত্রিক মেনে চলা প্রয়োজন যেমন সৃজনশীল পদ্ধতি।
২২ শিক্ষার্থী কল্যাণ ও নির্দেশনা ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান কর্মসূচি কার্যকর ভাবে প্রবর্তন করা
২৩ শিক্ষার্থী ভর্তি এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মেধা ও প্রবনথা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির মাপকাঠি হয় সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে এবং প্রথম শ্রেণীতে বিষয় ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেবার প্রবণতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
২৪ শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাদান পদ্ধতি যেন আনন্দদায়ক করা যায় এ ব্যাপারে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
২৫ শিক্ষকদের মর্যাদা অধিকার ও দায়িত্ব শিক্ষকদের মর্যাদাও বেতন গ্রেড বাড়ানোর প্রস্তাব এ অধ্যায় বলা আছে এবং শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে তাদের সচেতন করা হয়েছে।
২৬ শিক্ষাক্রম পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক এই বিষয়গুলো এমন হওয়া উচিৎ যাতে করে শিক্ষার্থীরা বাস্তব কর্মমূখী নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জীবনমুখী হয়ে উঠে।
২৭ শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষা সংক্রান্ত সকল আইন বিধিবিধান ও আদেশবলী একত্রিত করে এই শিক্ষানীতির আলোকে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২৮ শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে বিশেষ কয়েকটি পদক্ষেপ শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিশেষ কিছু পদক্ষেপের উল্লেখ আছে।
২৯ অর্থায়ন শিক্ষাখাতে বিভিন্ন উন্নতির জন্য শিক্ষানীতির জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


ইতিবাচক দিক ঃ
প্রথমবারের মত শিক্ষানীতির খসড়া জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরা হলো ঃ-
১. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা। এই শিক্ষানীতির লক্ষ্য।
২. প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন বাধ্যতামুলক, অবৈতনিক ও সকলের জন্য এক্ি মানের করা হয়েছে (পৃষ্ঠা নং-১১)।
৩. শিক্ষার্থীদের শারিরীক শাস্তি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
৪. পিছিয়ে পড়া এলাকাসহ গ্রামীন সকল বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দানের চেষ্টা করা হয়েছে।
৫. খসড়ার বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সারাদেশে প্রাথমিক স্তরে নির্ধারিত বিসয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠসূচি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
৬. শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
৭. আদিবাসী শিশুদের তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৮. আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায় এবং যে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত।
৯. মাদ্রাসা শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়ে তার আধুনিকরণ করা হবে।
১০. সাধারণ শিক্ষার মত মাদ্রাসা শিক্ষার শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ সমভাবে উন্মুক্ত করা হবে।
১১. বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মৌলিক গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ হবে।
১২. প্রত্যেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে হবে ও ইলেকট্রনিক গ্রহাক হিসেবে সকল গবেষণা জার্নাল সংগ্রহ করতে হবে।
১৩. দেশে একটি জাতয় শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
১৪. প্রাথমিক শিক্ষার প্রারম্ভে এক বছরের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর প্রস্তাব (পৃষ্ঠা নং-১০)।
১৫. প্রতিবন্দীদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ।
১৬. বিদ্যালয়ের পরিেেবশ যেন আনন্দময় ও আকর্ষণীয় হয় তা প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৭. প্রাথমিক মাধ্যমিক ও বেরসকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতি বদলি এবং প্রশিক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র শিক্ষক নির্বাচন উন্নয়নের কমিশন গঠনের প্রস্তাব ও ইতিবাচক।
১৮. উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির কোনও নূন্যতম যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা ও ইতিবাচক।
১৯. বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক বিদ্যায়তনে বিদ্যায়তনে বিদ্যামান বৈষম্য দুরীকরনে আগ্রহ।
২০. বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে প্রধান্য দেবার বিষয়টিও প্রশংসার দাবি রাখে।
২২. সকল ধারায় বাংলাদেশে স্ট্যাডিজ বিষয়টি রাখার প্রস্তাবটিও ঠিক আছে।
২৩. প্রাথমিক শিক্ষা হলো সাংবিধানিক অধিকার তাই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তনের একটি ইতিবাচক ফলাবর্তন বিদ্যমান।
২৪. তথ্য প্রযুক্তি আগামী দিনের শিক্ষাব্যবস্থার কম্পিউটার সাক্ষরতায় আবশ্যকতা তুলে ধরা হয়েছে।
২৫. ভোকেশনাল শ্কিষার পরিসর বৃদ্ধি এবং শিক্ষার অষ্টম থেকে দ্বাদশ বছর পর্যন্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা করে জাতীয় দক্ষতামান ১-৪ পর্যন্ত অর্জনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।
২৬. কোন স্তর থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা শিক্ষানীতিতে উল্লেখ আছে যেমন-প্রথম শ্রেণী থেকে।
২৭. খসড়া নীতির শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ২৩ নম্বর লক্ষ্যটি হলো। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা যা প্রশংসার দাবি রাখে।

নেতিবাচক দিক ঃ
১. ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি কেউই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবেন না ভেবেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
২. যে ২৪টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেই সব লক্ষ্য আর সুপারিশমালার মধ্যে যথেষ্ট স্ববিরোধীতা রয়ে গেছে।
৩. খসড়া শিক্ষানীতির বানানটি ভ্রট বাক্য বিন্যাসে ত্র“টি এমনকি দুর্বোধ বাক্যের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।
৪. শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে গিয়ে সুচনার বেশ কিচু বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে সের্যুলার শিক্ষানীতি সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৫. শিক্ষানীতিটির কোন দর্শন নেই যোগ্যতার টিকে বাক্য নীতিটি দর্শন হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয় (পৃঃ৩)
৬. উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব লক্ষনীয়।’
৭. মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যক্তিটি মাদ্রাসাগুলো নিয়ে খসড়াতে কোন প্রস্তাব নেই।
৮. ইংরেজি মাধ্যমে স্কুলগুলো নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি।
৯. অধ্যায় ১৮ বিশেষ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও শারিরীক শিক্ষা স্কাউট ও গার্ল সাইড এবং ব্রতচারী এ অধ্যায়টি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বিশেষ শিক্ষা শিরোনাম আসতে পারতো কারণ বিশেষ শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতি।
১০. এই খসড়া শুধুমাত্র কাঠামোর কথা বলা আছে নীতি মেধা দর্শন সংক্রান্ত কোন কথাই এখানে নেই।
১১. খসড়ায় নৈতিক শিখাবে ধর্ম শিক্ষার অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে যা মোটেও কাম্য নয়।
১২. মাধ্যমিক স্তরের ও তিনটি ধারা সাধারণ মাদ্রাসা এবং কারিগরি পাশাপাশি বিশেষ ব্যব্সতা হিসেবে ও লেভেল এবং এ লেভের যা একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় কল্পনাও করা যায় না।
১৩. আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অজূনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে খসড়া নীতিতে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার উপর জোরারোপ কাম্য নয় (পৃঃ ৪)।
১৪. বয়স্ক ও উপনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও প্রবাসীদের চাহিদা বিবেচনায় নেয়ার সুপারিশটি অনেকটাই ভিত্তিহীন।
১৫. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি মোটেও গ্রহণ যোগ্য নয়।
১৬. নারী শিক্ষা বিষয়ক কৌশল ৭ এ (পৃঃ ৪৯) মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার স্টাডিজ ও প্রজনন স্বাস্থ্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যা খসড়ার একটি দুর্বলতম বিষয়।
১৭. ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ঝরে পড়া ছাত্রীদের মূলধারার ফিরিয়ে আনার জন্য কোন পদক্ষেপের উল্লেখ নেই।
১৮. প্রাথমিক শ্কিষার দায়িত্ব বেসরকাররি বা এনজিও খাতে হস্তান্তর করা যাবে না (পৃঃ ১২) এ আশ্বাস দেবার পাশাপাশি পৃঃ ১৭তে সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপন কে উৎসাহিত করা হয়েছে যা খসড়ার একটি দুর্বল দিক।
১৯.প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার মানোন্নয়ন ফাউন্ডেশন বা অন্য কোন উপযুক্ত নামে প্রাথমিকভাবে ২০-২৫ লক্ষ টাকার স্থায়ী তহবিলের সুপারিশ করা হয়েছে যার অর্থ মূলত স্থানীয় বিত্তবানরা দান করবেন ও সরকার ও অনুদান দেতে এখানে প্রাথমিক শিক্ষা পূর্ণ দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে না।
২০. মাধ্যমিক স্তরের অর্থায়ন সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি।
২১. উচ্চশিক্ষা অধ্যায়ের কৌশল ১৭ তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকটা বাণিজ্যিক হবে পরামর্শ প্রদান করা হয়।
২২. উচ্চ শিক্ষা অধ্যায়ের কৌশল ১৬তে আমাদের দেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকে উৎসাহ প্রদান করা হবে।
২৩. পৃষ্ঠা ৮১তে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হতে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে উল্লেখ করে শিক্ষানীতিটিকে অনেকটা আন্তর্জাতিক চাহিদা ভিত্তিক বিসয়ে রূপান্তর করেছে।
২৪.সেব্যুলায়ের কথা বলে ও পাঠক প্রাথমিক শিক্ষার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আনা হয়েছে।
২৫. প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে খসড়ার কোন সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
২৬. খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর ও সচিবদের মর্যাদার যে মানক্রমের কথা বলা হয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
২৭. এই শিক্ষানীতিতে ললিতকলা বিষয়টি রাখা হলেও সংস্কৃতিনীতি রক্ষার বিশেষ কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
২৮. প্রথম অধ্যায়টিতে প্রকৃতপক্ষে যা বিবৃত করা হয়েছে তা অনেকাংশ আসলে শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তাই এর নাম হওয়া উচিত। জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য?
২৯. পৃষ্ঠা ৭ এ বলা হয়েছে শিক্ষানীতি রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে এখানে রণকৌশল শব্দটির ব্যাখ্যা যুক্তিযুক্ত নয়।
৩০. প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিতে আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে হিসেবে বাংলা ভাষার অবস্থান কী? এবং জাতীয় পর্যায়ে আমাদের ভাষানীতি কি হবে? সে সম্পর্কে তেমন কিছু উল্লেখ করা হয় নি শুধুমাত্র আর্ন্তজাতিক ভাগ ইনস্টিটিউটকে কার্যকর ও সমৃদ্ধ করার কথা ছাড়া (পৃঃ ৪)।
৩১. শিক্ষার মান্নোয়ন সম্পর্কে কোন অধ্যায় যুক্ত হয়নি সেখানে দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার মান্নোয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৩২. শিক্ষার্নীতিতে বলা আছে প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ও সকলের জন্য একই মানের (পৃঃ ১২) কিন্তু কিভাবে তা প্রণয়ন করা হবে বলা হয় নি।
৩৩. বৈষম্য দূর করে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগকে অবারিত করতে প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে কোন নীতিমালা সংযোজিত হয় নি।
৩৪. বাংলাদেশ অধ্যায়ন (ইধহমষধফবংয ঝঃঁফরবং) বিষয়ে পাঠদানকারী প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কিভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা হবে সে বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে নেই।
৩৫. বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিষয়টিকে ব্যাপকতা দেয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা স্তরে ফাউন্ডেশন কোর্স ও স্নাতক শ্রেণীতে বাংলাদেশ অধ্যায়ন কোর্সটি বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে শিক্ষানীতিকে কোস উল্লেখ নেই।
৩৬. প্রাথমিক শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা কিংবা দিক নির্দেশনা এ শিক্ষানীতিতে অনুপস্থিতি।
৩৭. শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে স্বল্প মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করার নির্দেশনা এ শিক্ষানীতিতে নাই।
৩৮. দুষ্ট রাজনীতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সেকে পৃথক করার জন্য কোন পদক্ষেপ এই শিক্ষানীতিতে নেই।

সমালোচনা:
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে দিনবদলের ডাক দিয়ে। পরিবর্তনের জন্যই হয়তো সরকার ক্ষমতায় এসে তিন মাসের মধ্যে নতুন একটি শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করেছে এবং এ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে তা বাস্তাবায়নের ইচ্ছাও জ্ঞাপন করেছেন।

প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা পরিশেষে দেখা যাচ্ছে এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

এক, প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডিকে বিস্তৃত করে একে ৮ বছর মেযাদি কার্যক্রমে উন্নীত করে এর আওতায় ৫-১৩ বছরের সকল শিশুকে এনে বাধ্যতামুলক শিক্ষা প্রদানের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে বাস্তাবায়িত হবে তা বিস্তারিত ভাবে বলা হয়নি যদিও উপায় হিসেবে শিক্ষর্থীর জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার কথা আছে।

দুই, আগামীর শিক্ষার্থীরা যেন কম্পিউটার ভিত্তিক বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে পারে সেই কারনে কম্পিউটার সাক্ষরতার আবশ্যকতা তুলে ধরা হয়েছে। খসড়া শিক্ষানীতিতে।

তিন, কারিগরি শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির আকাঙ্খা ব্যক্ত করা হলেও উচ্চশিক্ষাকে অনেকটাই উপেক্ষা করা হয়েছে।

চার, প্রতিবন্ধী ও উপজাতিদের শিক্ষা অধিকারকে মূল্যায়ন করা হলেও একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে উপযুক্ত দিক নির্দেশনা নেই,
পাঁচ, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার কথা বলা হলেও ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির কথা শুধুমাত্র উদ্দেশ্যের পাতায় স্থান পেয়েছে।

ছয়, বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মাঝে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করার জন্য বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ের সংযোজন প্রশংসার দাবি রাখে কিন্তু কিভাবে এ বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক তৈরি হবে তা বলা হয়নি।
সাত, শিক্ষানীতিতে গ্রন্থাগারের গঠন ও উন্নয়নের যে কথাটি বলা হয়েছে তা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত সকল ধারার শিক্ষার্থীদের জন্য একই ধরনের শিক্ষার সুযোগ দেবার মত বেশ কিছু সুচিন্তার সমাবেশ ঘটেছে এই শিক্ষানীতিতে, তবে প্রস্তাবিত শিক্ষনীতিটি হলো-

“শিক্ষা বিষয়ক প্রবল আশাবাদ”।
কারণ এখানে শিক্ষাক্ষেত্রের ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয়ক হাজারো মুখোরোচক বুলি ব্যক্ত করা হয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়েনের প্রয়োজনীয় দিকানির্দেশনা দেয়া হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রকে সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত করার অভিপ্রায় থাকলেও এর উপায় প্রকাশ করা হয়নি, এমন হাজারো আশার বানী শোনানো হয়েছে। তবে শিক্ষানীতিতে কিছু ভাল বিষয় রয়েছে তাই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে কিছু সংস্কার এনে পাশাপাশি কিছু উপযুক্ত পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত একটি শিক্ষানীতি প্রনীত হলেই কেবল এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
তবে জাতীয় শিক্ষনীতি ২০০৯ এর চূড়ান্ত সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার কথা বাদ দেয়া হয়েছে সেখানে প্রাথমিক স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও কিছু সুপারিশ নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশনামা মন্ত্রীসভার যেকোন বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ঠ সূত্রও হতে তথ্য পাওয়া গেছে।


একটি আদর্শ শিক্ষনীতি : আমাদের ভাবনা
১. শিক্ষানীতির একটি দর্শন শিক্ষানীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
২. শিক্ষনীতিতে শিক্ষাব্যবস্থার শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা নয় বরং প্রায়োগিক উন্নয়নের কথাও থাকবে।
৩. প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক ও এই সাংবিধানিক অধিকার জনগাণের হাতে ন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা থাকতে হবে।
৪. প্রতি ২০০ পরিবারের জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫. উচ্চশিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে এবং এর জন্য সকলের বহনযোগ্য বেতন ফি আরোপ করা যাবে ।
৬. শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে তথ্যনির্ভর ও বিজ্ঞানভিত্তিক।
৭. সকল ক্ষেত্রে একমুখী শিক্ষার প্রসার করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থার একাধিক ধারা থাকবে না।
৮. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সায়ত্বশাসন প্রদান করা হবে।
৯. শিক্ষকাদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসম্পর্কে প্রয়োজনীয় নিদের্শনামা শিক্ষানীতিতে থাকবে।
১০. শিক্ষার্থী মুল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকবে।
১১. শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক সর্বাঙ্গীন বিকাশের উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন সুনিশ্চিত করতে হবে।
১২. ক্ষুদ্র উপাজাতিদের তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকার প্রদান করা হবে।
১৩. শিক্ষার সকল আর্থিক দায়িত্ব সরকার গ্রহন করবে।
১৪. প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকারের কথা শিক্ষনীতিতে উল্লেখ থাকবে।
১৫. দেশীয় সংস্কৃাতির মান রক্ষার শিক্ষানীতির সুস্পষ্ঠ দিক নির্দেশনা থাকবে।
১৬. শিক্ষাক্রমের কোন একধাপে শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষবিজ্ঞান পঠন পাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. বিজ্ঞান শিক্ষার সুনির্দিষ্ঠ দর্শনসহ বাস্তবভিত্তিক বিজ্ঞান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
১৮. শিক্ষা সকল স্তরে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতির সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১৯. প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার ল্যাবের স্থাপন করা হয়, সে বিষয়ে নীতিমালা থাকবে।
২০. সকল স্তরের শিক্ষক্রমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয়বস্তুর অন্তর্ভূক্ত কারণসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী/ কারিগর নিয়োগ দিতে হবে।
২১. প্রাথমিকস্তরে কোন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে বরং ভর্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার প্রণয়ন করতে হবে।
২২. সকলস্তরের শিক্ষকদের সম্মানজনক পদমর্যাদা ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে।
২৩. শ্ক্ষিাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
২৪. প্রতিটি জেলার ঝপযড়ড়ষ উরংঃৎরপঃ অঁঃযড়ৎরঃু স্থাপন করে বিদ্যালয় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান পরিচালনা করতে হবে।
২৫. জাতীয় আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্র“তি করতে হবে।
২৬. মাতৃভাষা ও অন্যান্য ভাষা শিক্ষা শিখন ও ব্যবহারের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
২৭. শিক্ষার্থীদের গবেষণার উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা শিক্ষানীতিতে থাকবে।
২৮. শ্ক্ষিাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ব্যবহার উপযোগী ল্যাবেটরি স্থাপনের প্রয়াজনীয় পদক্ষেপের কথাও শিক্ষানীতিতে থাকা প্রয়োজন।
২৯. সকল ধরনের নোটবইগুলো যেন বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং শ্ক্ষিার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উল্লেখ থাকবে শিক্ষনীতিতে।
৩০. শিক্ষানীতিতে শ্ক্ষিারমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচী, শিক্ষা উপকরন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, শিক্ষকের যোগ্যতা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, শিখন শেখানোর পদ্ধতি, অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ ও মূল্যায়ন থাকবে।
৩১. সাধারন শিক্ষাব্যবস্থার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার যে পার্থক্য তা দূর করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করা।
৩২. শিক্ষার প্রসারে দূরশিক্ষন পদ্ধতি যেমন: রেডিও টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩৩. বর্তমানে প্রচলিত কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য ক্লাসে যথাযথ শিক্ষা প্রদান ব্যবস্থা থাকবে।

মন্তব্য
মান সম্মত শিক্ষার উর গুরুত্ব আরোপ করে দেশে প্রচুর সেমিনার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেখালেখিও কম হয়নি। একাদিকে চলছে নামিদামি বিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ, অর্থ-খরচ আর কোচিং করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাশাপাশি অন্যদিকে পড়ে আছে জরাজীর্ণ ক্লাসরুম, শিক্ষকের অপ্রতুলতা, শিক্ষার উপকরণের অভাব। দেশে মানসম্মত শিক্ষা উর্ধ্বে যেতে বসেছে এমন অভিযোগ বহুদিনের, তবে আমার প্রশ্ন দেশে মানসম্মত কোন শিক্ষা আদৌ আছে কী?
একটা ভাল বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিশুদের ভর্তিযুদ্ধ, প্রমান করে যে, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর অভিাভবকদের আস্থা নাই, গ্রামেও স্বচ্ছল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শহরে বা উপজেলা শহরে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এসবই প্রমাণ করে দেশে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নেই।

বিভিন্ন শিক্ষাবিদও শিক্ষা বিষয়ক গবেষকরা শিক্ষার মান বৃদ্ধি সংক্রান্ত হাজারো বক্তব্য প্রদান করেন কিন্তু পরিবর্তন সেই অবস্থার। এসব থেকেই বেলা যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যতসব কথা নীতিবাক্য ব্যয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তা খুব একটা কাজে আসছে না। কারণ গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা কোন নীতি, আদর্শ কিংবা পরিকল্পনা বিহীন ভাবেই গড়ে উঠেছে। শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা পূরনের জন্য গড়ে উঠেছে একাধিক ধারা আর উপধারা পাশাপাশি নানা প্রকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আসলে কোন শিক্ষানীতিবিহীন অনিয়ন্ত্রিত বা অপরিকাীল্পত ভাবে যে শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেছে তাতে শিক্ষার মান রক্ষা আশা করাই নিরর্থক। পাশাপাশি স্বাক্ষরতার হার ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবও বিদ্যামন। এমন অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশে ৬টি শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও বিবিধ অসঙ্গতির কারণে তার কোনটাই বাস্তবায়িত হয়নি ফলে এগুলোকে বলা হয় প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি। রাজনৈতিক পালাবদল, শিক্ষনীতির গ্রহণযোগ্যতার অভাব ইত্যাদির কারণে এক এক করে কবর রচিত হয়েছে ৬ টি প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির তবে শিক্ষনীতিগুলো প্রায়ই কাছাকাছি ধরনের কোনটিতেই সাধারণ জনগন ও ছাত্রদের আকাক্সক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়নি, পাশাপাশি হাজারো অসঙ্গতি বিদ্যমান বর্তমানের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি-২০০৯ এ।

কোন শিক্ষনীতিতেই দেশের জনসাধারণের সাংবিধানিক অধিকার শিক্ষা গ্রণের পূর্ণ সুযোগ প্রদত্ত হয় নি, প্রাথমিক শিক্ষাকে আবশ্যক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাব ও বিদ্যমান। এত সব অসঙ্গতি করণেই আজ আবাদি কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারে নি। যার ফলে ব্যাঙ্গের ছাতার মত পরিচর্যাহীনভাবে ঘড়ে উঠেছে আশাদের শিক্ষাব্যবস্থা। যার উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষানীতি। তাই ২০০৯ সালে প্রন্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিতে আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন করে একটি চূড়ান্ত শিক্ষানীতির বাস্তাবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ একটি শিক্ষানীতিই পারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়ন করতে পাশাপাশি একটি শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী বিনির্মাণ করতে।

উপসংহার
বাংলাদেশের শিক্ষার নীতি সম্পর্কিত তুলনামুলক আলোচনার এ কাজটি করতে গিয়ে আমরা সকলেই যে কষ্টটি অনুভব করলাম সেটি হল, শিক্ষানীতি শব্দটিকে এর শব্দগত অর্থে শিক্ষার জন্য নীতি হিসাবে ছাত্রসমাজকে পাশাপাশি পুরো জাতিকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতির অর্থ হওয়া উচিত নীতির জন্য শিক্ষা। একজন মানুষকে নীতিবান, নিষ্ঠাবান, মানবীয় গুনাবলীতে মণ্ডিত এবং মনুষত্বের প্রতিমা হিসাবে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য জাতিকে কতগুলো ডিগ্রি কিংবা সনদপত্রের ধারক করা নয়। এ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সকল শিক্ষনীতিই কোন না কোন দিক থেকে অপূর্ণ। আর এ অপূর্নতার মাশুল দিতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। তাই শিক্ষানীতি প্রনয়নে আমাদের দাবি, শিক্ষাকে যেন আমাদের মানবিক উন্নতির জন্য দান করা হয়। এজন্য শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়া উচিত সে সকল ব্যক্তিবর্গের হাতে যারা শিক্ষার অর্থ বোঝে জাতিকে অশিক্ষার শাপযুক্ত করতে নিবেদিত প্রান এবং প্রয়োজনে খড়গহস্ত।


কোন মন্তব্য নেই: